পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/৫৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৭
পল্লী-সমাজ

তথাপি ইস্কুল আর চলিতে চাহিতেছে না। ছেলেবয়সে এই বিদ্যালয়ে রমেশও কিছুদিন পড়িয়াছিল, তাহার স্মরণ হইল। পাড়ুই মহাশয় জানাইল যে, চাল ছাওয়া না হইলে আগামী বর্ষায় বিদ্যালয়ের ভিতর আর কেহ বসিতে পারিবে না। কিন্তু সে না হয় পরে চিন্তা করিলে চলিবে, উপস্থিত প্রধান দুর্ভাবনা হইতেছে যে, তিনমাস হইতে শিক্ষকেরা কেহ মাহিনা পায় নাই—সুতরাং, ঘরের খাইয়া বন্যমহিষ তাড়াইয়া বেড়াইতে আর কেহ পারিতেছে না।

 ইস্কুলের কথায় রমেশ একেবারে সজাগ হইয়া উঠিল। হেডমাষ্টার মহাশয়কে বৈঠকখানায় লইয়া গিয়া একটি একটি করিয়া সমস্ত সংবাদ গ্রহণ করিতে লাগিল। মাষ্টারপণ্ডিত চারিজন; এবং তাঁহাদের হাড় ভাঙা খাটুনির ফলে গড়ে দুই জন করিয়া ছাত্র প্রতিবৎসর মাইনার পরীক্ষায় পাস করিয়াছে। তাহাদের নাম-ধাম বিবরণ পাড়ুই মহাশয় মুখস্থর মত আবৃত্তি করিয়া দিল। ছেলেদের নিকট হইতে যাহা আদায় হয়, তাহাতে নীচের দুজন শিক্ষকের কোন মতে, ও গভর্ণমেণ্টের সাহায্যে আর একজনের সঙ্কুলান হয়; শুধু একজনের মাহিনাটাই গ্রামের ভিতরে এবং বাহিরে চাঁদা তুলিয়া সংগ্রহ করিতে হয়। এই চাঁদা সাধিবার ভারও মাষ্টারদের উপরেই—তাঁহারা গত তিন চারি মাস কাল ক্রমাগত ঘুরিয়া ঘুরিয়া প্রত্যেক বাটীতে আট-দশবার করিয়া হাঁটা-হাঁটি করিয়াও সাতটাকা চারি আনার বেশী আদায় করিতে পারেন নাই!