উপস্থিত হইল। বাহিরে চণ্ডীমণ্ডপের পাশের ঘরে গোমস্তা গোপাল সরকার খাতা লিখিতেছিল, ভৈরব ব্যস্ত হইয়া কহিল, “সরকার মশাই, লোক পাঠাননি? গড় থেকে মাছ ধরানো হচ্চে যে!” সরকার কলম কাণে গুঁজিয়া মুখ তুলিয়া প্রশ্ন করিল, “কে ধরাচ্ছে?” “আবার কে? বেণীবাবুর চাকর দাঁড়িয়ে আছে, মুখুয্যেদের খোট্টা দরওয়ানটাও আছে—দেখলুম; নেই কেবল আপনাদের লোক। শীগ্গির পাঠান।” গোপাল কিছুমাত্র চাঞ্চল্য প্রকাশ করিল না; কহিল, “আমাদের বাবু মাছমাংস খান্ না।” ভৈরব কহিল, “নাই খেলেন, কিন্তু ভাগের ভাগ নেওয়া চাই ত!” গোপাল বলিল, “আমরা পাঁচজন ত চাই, বাবু বেঁচে থাক্লে তিনিও তাই চাইতেন। কিন্তু রমেশ বাবু একটু আলাদা ধরণের।” বলিয়া ভৈরবের মুখে বিস্ময়ের চিহ্ন দেখিয়া সহাস্যে একটুখানি শ্লেষ করিয়া কহিল, “এ ত তুচ্ছ দুটো সিঙি মাগুর মাছ, আচায্যি মশায়! সেদিন হাটের উত্তরদিকে সেই প্রকাণ্ড তেঁতুলগাছটা কাটিয়ে ওঁরা দুঘরে ভাগ ক’রে নিলেন, আমাদের কাঠের একটা কুঁচোও দিলেন না। আমি ছুটে এসে বাবুকে জানাতে, তিনি বই থেকে একবার একটু মুখ তুলে হেসে আবার পড়্তে লাগলেন। জিজ্ঞেস কর্লুম, ‘কি করব বাবু?’ আমার রমেশ বাবু আর মুখটা একবার তোলবারও ফুরসৎ পেলেন না। তার পর পীড়াপীড়ি করতে বইখানা মুড়ে রেখে একটা হাই তুলে বল্লেন, “কাঠ? তা’ আর কি তেঁতুল গাছ নেই?”