তাহার এই ভাইটিকে প্রাণতুল্য ভালবাসিলেও তাহার কথায় এবং ব্যবহারে এরূপ আবেগ উচ্ছ্বাস কখন প্রকাশ পাইত না।
যতীন প্রশ্ন করিল, “ছোটদা’র সমস্ত পড়া শেষ হয়ে গেছে দিদি?” রমা তেমনি স্নেহকোমলকণ্ঠে জবাব দিল, “হাঁ ভাই, তাঁর সব পড়া সাঙ্গ হয়ে গেছে।” যতীন আবার জিজ্ঞাসা করিল, “কি ক’রে তুমি জানলে?” প্রত্যুত্তরে রমা শুধু একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া মাথা নাড়িল। বস্তুতঃ এ সম্বন্ধে সে, কিংবা গ্রামের আর কেহ, কিছুই জানিত না। তাহার অনুমান যে সত্য হইবেই, তাহাও নয়, কিন্তু কেমন করিয়া তাহার যেন নিশ্চয় বোধ হইয়াছিল, যে ব্যক্তি পরের ছেলের লেখাপড়ার জন্য এই অত্যল্পকালের মধ্যেই এরূপ সচেতন হইয়া উঠিয়াছে, সে কিছুতেই নিজে মূর্খ নয়।
যতীন এ লইয়া আর জের করিল না। কারণ, ইতিমধ্যে হঠাৎ তাহার মাথার মধ্যে আর একটা প্রশ্নের আবির্ভাব হইতেই, চট্ করিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া বসিল, “আচ্ছা দিদি, ছোটদা, কেন আমাদের বাড়ী আসেন না? বড়দা ত রোজ আসেন।” প্রশ্নটা ঠিক যেন একটা আকস্মিক তীক্ষ্ণ ব্যথার মত রমার সর্ব্বাঙ্গে বিদ্যুদ্বেগে প্রবাহিত হইয়া গেল। কিন্তু, তথাপি হাসিয়া কহিল, “তুই তাকে ডেকে আন্তে পারিস্ নে?” “এখনি যাব দিদি?” বলিয়া তৎক্ষণাৎ যতীন উঠিয়া দাঁড়াইল। “ওরে কি পাগ্লা ছেলে রে তুই!” বলিয়া রমা চক্ষের পলকে তাহার ভয়ব্যাকুল দুই বাহু বাড়াইয়া