বিশ্বেশ্বরী স্নেহার্দ্রকণ্ঠে প্রশ্ন করিলেন, “শরীরটা কি এখানে ভাল থাক্চে না,—বাবা?” রমেশ নিজের সুদীর্ঘ এবং অত্যন্ত বলশালী দেহের পানে বার দুই দৃষ্টিপাত করিয়া বলিল, “এ যে খোট্টার দেশের ডালরুটির দেহ জ্যাঠাইমা, এ কি এত শীঘ্রই খারাপ হয়? তা’ নয়, শরীর আমার বেশ ভালই আছে, কিন্তু এখানে আমি আর একদণ্ডও টিঁকতে পাচ্ছিনে, সমস্ত প্রাণটা যেন আমার থেকে-থেকে খাবি খেয়ে উঠ্চে।” শরীর খারাপ হয় নাই শুনিয়া, বিশ্বেশ্বরী নিশ্চিন্ত হইয়া হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই তোর জন্মস্থান—এখানে টিঁকতে পারচিস্নে, কেন বল্ দেখি?” রমেশ মাথা নাড়িয়া বলিল, “সে আমি বল্তে চাইনে। আমি জানি তুমি নিশ্চয়ই সমস্ত জানো।” বিশ্বেশ্বরী ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া, একটু গম্ভীর হইয়া বলিলেন, “সব না জান্লেও কতক জানি বটে। কিন্তু, সেই জন্যেই ত বলচি, তোর আর কোথাও গেলে চল্বে না, রমেশ?” রমেশ কহিল, “কেন চল্বে না, জ্যাঠাইমা? কেউ ত এখানে আমাকে চায় না।” জ্যাঠাইমা বলিলেন, “চায় না বলেই ত তোকে আর কোথাও পালিয়ে যেতে আমি দেব না। এই যে ডাল রুটি খাওয়া দেহের বড়াই কর্ছিলি রে, সে কি পালিয়ে যাবার জন্যে?” রমেশ চুপ করিয়া রহিল। আজ কেন যে তাহার সমস্ত চিত্ত জুড়িয়া গ্রামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বলিয়া উঠিয়াছিল, তাহার একটু বিশেষ কারণ ছিল। গ্রামের যে পথটা বরাবর ষ্টেশনে গিয়া পৌঁছিয়াছিল, তাহার একটা