রে! এ কি ভয়ানক ভ্রান্তি! তাহার সহরের মধ্যেও যে এমন বিরোধ, এত পরশ্রীকাতরতা চোখে পড়ে নাই! আর সেই কথাটা মনে পড়িতে তাহার সর্ব্বাঙ্গ বহিয়া যেন অসংখ্য সরীসৃপ চলিয়া বেড়াইতে লাগিল। নগরের সজীব চঞ্চল পথের ধারে যখনই কোন পাপের চিহ্ন তাহার চোখে পড়িয়া গেছে; তখনই সে মনে করিয়াছে, কোনমতে তাহার জন্মভূমি সেই ছোট্ট গ্রামখানিতে গিয়া পড়িলে সে এই সকল দৃশ্য হইতে চিরদিনের মত রেহাই পাইয়া বাঁচিবে। সেখানে যাহা সকলের বড়—সেই ধর্ম্ম আছে, এবং সামাজিক চরিত্রও আজি সেখানে অক্ষুণ্ণ হইয়া বিরাজ করিতেছে! হা ভগবান্! কোথায় সেই চরিত্র? কোথায় সেই জীবন্ত ধর্ম্ম আমাদের এই সমস্ত প্রাচীন নিভৃত গ্রামগুলিতে! ধর্ম্মের প্রাণটাই যদি আকর্ষণ করিয়া লইয়াছে, তাহার মৃতদেহটাকে ফেলিয়া রাখিয়াছে কেন? এই বিবর্ণ বিকৃত শবদেহটাকেই হতভাগ্য গ্রাম্য-সমাজ যে যথার্থ ধর্ম্ম বলিয়া প্রাণপণে জড়াইয়া ধরিয়া, তাহারি বিষাক্ত পূতিগন্ধময় পিচ্ছিলতায় অহর্নিশি অধঃপথেই নামিয়া চলিতেছে! অথচ সর্ব্বাপেক্ষা মর্ম্মান্তিক পরিহাস এই যে, জাতিধর্ম্ম নাই বলিয়া সহরের প্রতি ইহাদের অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধারও অন্ত নাই!
রমেশ বাড়ীতে পা দিতেই দেখিল, প্রাঙ্গণের একধারে একটি প্রৌঢ়া স্ত্রীলোক একটি এগারো বারো বছরের ছেলেকে লইয়া জড়সড় হইয়া বসিয়াছিল, উঠিয়া দাঁড়াইল। কিছু না জানিয়া শুধু ছেলেটির মুখ দেখিয়াই রমেশের বুকের ভিতরটা যেন