মনে হইল, তাহার এই তেইশবর্ষব্যাপী জীবনটা এই একটা বেলার মধ্যে যেন আগাগোড়া বদলাইয়া গেল। ছেলেবেলা হইতেই তাহার বিদেশে পরাশ্রয়ে কাটিয়াছে। খাওয়াটার মধ্যে ক্ষুন্নিবৃত্তির অধিক আর কিছু যে কোনো অবস্থাতেই থাকিতে পারে, ইহা সে জানিতই না। তাই, আজিকার এই অচিন্তনীয় পরিতৃপ্তির মধ্যে তাহার সমস্ত মন বিস্ময়ে, মাধুর্য্যে, একেবারে ডুবিয়া গেল। রমা বিশেষ কিছুই এখানে তাঁহার আহারের জন্য সংগ্রহ করিতে পারে নাই। নিতান্তই সাধারণ ভোজ্য ও পেয় দিয়া তাঁহাকে খাওয়াইতে হইয়াছে। এই জন্য তাহার বড় ভাবনা ছিল, পাছে তাঁহার খাওয়া না হয় এবং পরের কাছে নিন্দা হয়। হায় রে পর! হায় রে তা’দের নিন্দা! খাওয়া না হইবার দুর্ভাবনা যে তাহার নিজেরই কত আপনার এবং সে যে তাহার অন্তরের অন্তরতম গহ্বর হইতে অকস্মাৎ জাগিয়া উঠিয়া, তাহার সর্ব্ববিধ দ্বিধা-সঙ্কোচ সজোরে ছিনিয়া লইয়া, এই খাওয়ার জায়গায় তাহাকে ঠেলিয়া পাঠাইয়া দিয়াছিল, এ কথা কেমন করিয়া আজ সে তাহার নিজের কাছে লুকাইয়া রাখিবে। আজ ত কোন লজ্জার বাধাই তাহাকে দূরে রাখিতে পারিল না। এই আহার্য্যের স্বল্পতার ত্রুটি শুধু যত্ন দিয়া পূর্ণ করিয়া লইবার জন্যই সে সুমুখে আসিয়া বসিল। আহার নির্ব্বিঘ্নে সমাধা হইয়া গেলে, গভীর পরিতৃপ্তির যে নিশ্বাসটুকু রমার নিজের বুকের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিল, তাহা রমেশের নিজের চেয়ে যে কত বেশি, তাহা আর কেহ