পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি
দিগন্তে রক্তবর্ণ সূর্য—শীতের বরফ-চাপা শাসন সবে-মাত্র ভেঙে গেছে, প্লাম গাছের পত্রহীন শাখাগুলি জয়ধ্বনির বাহুভঙ্গীর মতো সূর্যের দিকে প্রসারিত, সাদা সাদা ফুলের মঞ্জরীতে গাছ ভরা। সেই প্লাম গাছের তলায় একটি অন্ধ দাঁড়িয়ে তার আলোকপিপাসু দুই চক্ষু সূর্যের দিকে তুলে প্রার্থনা করছে।
আমাদের ঋষি প্রার্থনা করেছেন: তমসো মা জ্যোতির্গময়, অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যাও। চৈতন্যের পরিপূর্ণতাকে তাঁরা জ্যোতি বলেছেন। তাঁদের ধ্যানমন্ত্রে সূর্যকে তাঁরা বলেছেন: ধিয়োযোনঃ প্রচোদয়াৎ—আমাদের চিত্তে তিনি ধীশক্তির ধারাগুলি প্রেরণ করছেন।
ঈশোপনিষদে বলেছেন, হে পূষন্, তোমার ঢাকা খুলে ফেলো, সত্যের মুখ দেখি; আমার মধ্যে যিনি সেই পুরুষ তোমার মধ্যে।
এই বাদলার অন্ধকারে আজ আমার মধ্যে যে ছায়াচ্ছন্ন বিষাদ সে ওই ব্যাকুলতারই একটি রূপ। সেও বলছে, হে পূষন্, তোমার ওই ঢাকা খুলে ফেলো, তোমার জ্যোতির মধ্যে আমার আত্মাকে উজ্জ্বল দেখি। অবসাদ দূর হোক। আমার চিত্তের বাঁশিতে তোমার আলোকের নিশ্বাস পূর্ণ করো—সমস্ত আকাশ আনন্দের গানে জাগ্রত হয়ে উঠুক। আমার প্রাণ-যে তোমার আলোকেরই একটি প্রকাশ, আমার দেহও তাই। আমার চিত্তকে তোমার জ্যোতিরঙ্গুলি যখনই স্পর্শ করে তখনই তো ভূর্ভুবঃস্বঃ দীপ্যমান হয়ে ওঠে। মেঘে মেঘে তোমার যেমন নানা রঙ আমার ভাবনায় ভাবনায় তোমার তেজ তেমনি সুখদুঃখের কত রঙ লাগিয়ে দিচ্ছে। একই জ্যোতি বাইরের পুষ্পপল্লবের বর্ণে গন্ধে এবং অন্তরের রাগে অনুরাগে বিচিত্র হয়ে ঠিকরে পড়ছে। প্রভাতে সন্ধ্যায় তোমার গান দিকে দিগন্তে বেজে ওঠে; তেমনি তোমারই গান আমার
১১২