পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি
বর্তমান ডায়ারির ২৮ বা ২৯ সেপ্টেম্বর (১৯২৪) তারিখের লেখায় ‘ শুভ-ইচ্ছা-পূর্ণ যে চিঠির উল্লেখ আছে তাহা পূরবীর ‘শিলংয়ের চিঠি’ কবিতার উদ্দিষ্টা শ্রীমতী নলিনীদেবী লিখিয়াছিলেন। এই চিঠির জবাবে রবীন্দ্রনাথ যাহা লেখেন, ১৩৪৯ আশ্বিনের ‘অলকা’ মাসিকপত্র হইতে তাহা এ স্থলে সংকলন করা গেল—
কল্যাণীয়াসু,
কলম্বোতে এসে যাত্রার আগের দিনেই তোমার সুন্দর চিঠিখানি পেয়ে বড়ো খুশি হয়েছি। আজ সকালে এসে পৌঁছলুম। তখন থেকে আকাশ মেঘে অন্ধকার। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি পড়ছে, আর বাদলা হাওয়া খামকা হাহুতাশ করে উঠছে। যাত্রার পূর্বে এরকম দুর্যোগে মনের উৎসাহ কমে। যায়—সূর্যকিরণ না পেলে মনে হয় যেন আকাশের দৈববাণী থেকে বঞ্চিত হলুম। এমন সময় তোমার চিঠি আমার হাতে এল, মনে হল বাংলাদেশ যেন একটি বাঙালি মেয়ের কণ্ঠে আমার কাছে জয়ধ্বনি পাঠিয়ে দিলেন। এই বৃষ্টিবাদলের পর্দার ভিতর থেকে বাংলার অন্তঃপুরের শাঁখ বেজে উঠল। যিনি সকল শুভ বিধান করেন তোমার শুভকামনা নিশ্চয় তাঁর কাছে গিয়ে পৌঁছবে, আমার যাত্রা সফল হবে।
এবারে কলকাতা থেকে বেরোবার আগে আমার চারি দিকে যেমন ছিল ভিড় তেমনি আমার দেহে মনে ছিল ক্লান্তি। আস নি ভালোই করেছ, কেননা তোমার সঙ্গে ভালো করে কথা বলা অসম্ভব হত। তুমি হয়তো ভাবছ আমি ভারী অহংকারী— ছোটো মেয়েদের ছোটো বলে খাতির করি নে। ভারী ভুল, আমি বড়োদের ভয় করি, তাদের সব কথা বিশ্বাস করি নে— আমার অন্তরের শ্রদ্ধা ছোটোদের দিকে। আমার কেবল ভয় পাছে আমার পাকা দাড়ি দেখে অকস্মাৎ তারা আমাকে নারদঋষির মতো ভক্তিভাজন মনে করে বসে।
কিন্তু যাই বলো, আমি ডায়ারি লিখতে পারব না। আমি ভারী কুঁড়ে। চিঠি লেখার, ডায়ারি লেখার, একটা বয়স আছে; সে বয়স আমার কেটে
১৩৬