পাতা:পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি.djvu/২০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি

 এই ভূমিকার মধ্যে আমার নিজের কৈফিয়ত আছে। কখনো অপরাধ করি নি তা নয়। সেই অপরাধের লোকসান ও পরিতাপ তীব্র বেদনায় অনুভব করেছি বলেই সাবধান হই। ঝড়ের সময় ধ্রুবতারাকে দেখা যায় না বলে দিক্‌ভ্রম হয়। এক-এক সময়ে বাহিরের কল্লোলে উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে স্বধর্মের বাণী স্পষ্ট করে শোনা যায় না। তখন ‘কর্তব্য’-নামক দশমুখ-উচ্চারিত একটা শব্দের হুঙ্কারে মন অভিভূত হয়ে যায়; ভুলে যাই যে, কর্তব্য বলে একটা অবচ্ছিন্ন পদার্থ নেই, আমার ‘কর্তব্য’ই হচ্ছে আমার পক্ষে কর্তব্য। গাড়ির চলাটা হচ্ছে একটা সাধারণ কর্তব্য, কিন্তু ঘোরতর প্রয়োজনের সময়েও ঘোড়া যদি বলে ‘আমি সারথির কর্তব্য করব’, বা চাকা বলে ‘ঘোড়ার কর্তব্য করব’, তবে সেই কর্তব্যই ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ডিমক্রেসির যুগে এই উড়ে-পড়া পড়ে-পাওয়া কর্তব্যের ভয়াবহতা চারি দিকে দেখতে পাই। মানবসংসার চলবে, তার চলাই চাই; কিন্তু তার চলার রথের নানা অঙ্গ—কর্মীরাও একরকম করে তাকে চালাচ্ছে, গুণীরাও একরকম করে তাকে চালাচ্ছে, উভয়ের স্বানুবর্তিতাতেই পরস্পরের সহায়তা এবং সমগ্র রথের গতিবেগ; উভয়ের কর্ম একাকার হয়ে গেলেই মোট কর্মটাই পঙ্গু হয়ে যায়।

 এই উপলক্ষে একটি কথা আমার মনে পড়ছে। তখন লোকমান্য টিলক বেঁচে ছিলেন। তিনি তাঁর কোনো এক দূতের যোগে আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে বলে পাঠিয়েছিলেন, আমাকে য়ুরোপে যেতে হবে। সে সময়ে নন্‌-কো-অপারেশন আরম্ভ হয় নি বটে কিন্তু পোলিটিক্যাল আন্দোলনের তুফান বইছে। আমি বললুম, ‘রাষ্ট্রিক আন্দোনের কাজে যোগ দিয়ে আমি য়ুরোপে যেতে পারব না।’ তিনি বলে পাঠালেন, আমি রাষ্ট্রিক চর্চায় থাকি, এ তাঁর অভিপ্রায়বিরুদ্ধ। ভারতবর্ষের যে বাণী আমি প্রচার করতে