পাতা:পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি.djvu/২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি

লেখা বন্ধ করে নীচে গেলুম। দেখি, একজন কাঁচা-বয়সের যুবক; হঠাৎ তার চাদরের অজ্ঞাতবাস থেকে একটা মোটা-গোছের খাতা বেরোল। বুঝলুম, আমারই আপন সম্প্রদায়ের লোক। কবিকিশোর একটুখানি হেসে আমাকে বললে, “একটা অপেরা লিখেছি।” আমার মুখে বোধ হয় একটা পাংশুবর্ণ ছায়া পড়ে থাকবে, তাই হয়তো আশ্বাস দেবার জন্যে বলে উঠল, “আপনাকে আর কিছুই করতে হবে না, কেবল গানের কথাগলোতে সুর বসিয়ে দেবেন, সবসুদ্ধ পঁচিশটা গান।” কাতর হয়ে বললুম, “সময় কই!” কবি বললে, “আপনার কতটুকুই বা সময় লাগবে। গান-পিছু বড়োজোর আধ ঘণ্টাই হোক।” সময় সম্বন্ধে এর মনের ঔদার্য দেখে হতাশ হয়ে বললুম, “আমার শরীর অসুস্থ।” অপেরা-রচয়িতা বললে, “আপনার শরীর অসুস্থ, এর উপরে আর কী বলব! কিন্তু যদি—”। বুঝলুম প্রবীণ ডাক্তারের সার্টিফিকেট আনলেও নবীন কবি বিচলিত হবে না। কোনো-একজন ইংরেজ গ্রন্থকারের ঘরে এই নাট্যের অবতারণা হলে কোন্‌ ফৌজদারিতে তার যবনিকাপতন হত, সে কথা মনে করলেও শরীর রোমাঞ্চিত হয়।

 মানুষের ঘরে ‘দরওয়াজা বন্ধ্‌’ এ কথাটিও কটু, আর তার ঘরে কোথাও পর্দা নেই এটাও বর্বরতা। মধ্যম পন্থাটাই দেখি সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। দুই বিরুদ্ধ শক্তির সমন্বয়েই সৃষ্টি, তাদের একান্ত বিচ্ছেদই প্রলয়, মানুষ নিজের ব্যবহারক্ষেত্রে এইটেই কেবলই ভোলে আর মার খেয়ে মরে।

 সূর্যের উদয়াস্ত আজও বাদলার ছায়ায় ঢাকা পড়ে রইল। মেঘের থলিটার মধ্যে কৃপণ আকাশ তার সমস্ত সোনার আলো এঁটে বন্ধ করে রেখেছে।

১৬