পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি
বালক আছে, তাকে দেখি, আমাদের বাড়িতে যে জায়গাটা স্থিতির পক্ষে সবচেয়ে অযোগ্য, পৃথিবীর ভারাকর্ষণশক্তিটাকে অশ্রদ্ধা জানানো ছাড়া যেখানে ওঠবার আর কোনো হেতুই নেই, সেইখানেই সে চড়ে বসে আছে। মাঝে মাঝে ভারাকর্ষণশক্তিও তাকে ছেড়ে কথা কয় নি, কিন্তু তবু তাকে দমিয়ে দিতে পারলে না। এমনি করে বিদ্রোহে সে হাত পাকাচ্ছে আর-কি।
মনে আছে, ছেলেবেলায় আমাদের তেতালার ছাদের সংকীর্ণ কার্নিসটার উপর দিয়ে চলে যাওয়াটাকে উঁচুদরের খেলা বলে মনে করতুম। ভয় করত না বলে নয়, ভয় করত বলেই। ভয়-নামক প্রাণের পাহারাওয়ালাটা ঠিক সেই মোড়ের মাথায় দেখা দিত বলেই তাকে ব্যঙ্গ করাটা মজা বলে মনে হত।
পুরুষের মধ্যে এই-যে কাণ্ডটা হয়, এ সমস্তই মনের চক্রান্তে। সে বলে, ‘প্রাণের সঙ্গে আমার নন-কো-অপারেশন যতই পাকা হবে ততই আমার মুক্তি হবে সহজ।’ কেন রে বাপু, প্রাণ তোমার কী অপরাধটা করেছে, আর এই মুক্তি নিয়েই বা করবে কী? মন বলে, ‘আমি অশেষের রাজ্যে সন্ধান করতে বেরোব, আমি দুঃসাধ্যের সাধনা করব, দুর্গমের বাধা কাটিয়ে দিয়ে দুলর্ভকে উদ্ধার করে আনব। আমি একটু নড়ে বসতে গেলেই যে দুঃশাসন নানারকম ভয় দেখিয়ে আমাকে পিছমোড়া করে বাঁধতে আসে তাকে আমি সম্পূর্ণ হার মানাব তবে ছাড়ব।’ তাই পুরুষ তপস্বী বলে বসে, ‘না খেয়েই বা বাঁচা যাবে না কেন? নিশ্বাস বন্ধ করলেই যে মরতে হবে, এমন কী কথা আছে?’ শুধু তাই নয়, এর চেয়েও শক্ত কথা বলে; বলে, ‘মেয়েদের মুখ দেখব না। তারা প্রকৃতির গুপ্তচর, প্রাণরাজত্বের যত-সব দাস সংগ্রহ করবার তারাই আড়কাঠি।’ যে-সব পুরুষ তপস্বী নয় শুনে তারাও বলে, ‘বাহবা!’
২৮