পাতা:পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি.djvu/৮৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি

লক্ষ্য খুঁজি নি, পথের আশেপাশে চেয়ে চেয়ে চলছি, যেন কোন্‌ আবছায়ার ভিতর থেকে আচমকা দেখা দেবে একটা ‘কী জানি’,—একটা ‘হয়তো’। বারান্দার কোণে খানিকটা ধুলো জড়ো করে আতার বিচি পুঁতে রোজ জল দিয়েছি। আজ যেটা আছে বীজ কাল সেটা হবে গাছ, ছেলেবেলায় সে একটা মস্ত ‘কী জানি’র দলে ছিল। সেই কী- জানিকে দেখাই সত্য দেখা। সত্যের দিকে চেয়ে যে বলে ‘জানি’ সেও তাকে হারায়, যে বলে ‘জানি নে’ সেও করে ভুল—আমাদের ঋষিরা এই বলেন। যে বলে ‘খুব জানি’ সেই অবোধ সোনা ফেলে চাদরের গ্রন্থিকে পাওয়া মনে করে, যে বলে ‘কিছুই জানি নে’ সে তো চাদরটাকে সুদ্ধ খুইয়ে বসে। আমি ঈশোপনিষদের এই মানেই বুঝি। ‘জানি না’ যখন ‘জানি’র আঁচলে গাঁঠছড়া বেঁধে দেখা দেয় তখন মন বলে ‘ধন্য হলেম।’ পেয়েছি মনে করার মতো হারানো আর নেই।

এইজন্যেই ভারতবর্ষকে ইংরেজ যেমন করে হারিয়েছে এমন আর য়ুরোপের কোনো জাত নয়। ভারতবর্ষের মধ্যে যে-একটা চিরকেলে রহস্য আছে সেটা তার কাছ থেকে সরে গেল। তার ফৌজের গাঁঠের মধ্যে যে বস্তুটাকে কষে বাঁধতে পারলে সেইটেকেই সে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষ বলে বুক ফুলিয়ে গদীয়ান হয়ে বসে রইল। ভারতবর্ষ সম্বন্ধে তার বিস্ময় নেই, অবজ্ঞা যথেষ্ট আছে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বাইরে ইংরেজ ভারত সম্বন্ধে যত অল্প আলোচনা করেছে এমন ফ্রান্স্‌ করে নি, জর্মনি করে নি। পোলিটিশনের চশমার বাইরে ভারতবর্ষ ইংরেজজাতির গোচরে আছে, এ কথাটা তার দৈনিক সাপ্তাহিক মাসিক কাগজ পড়ে দেখলে বোঝা যায় না।

৬৯