পিষিতে পিষিতে দন্তকণ্টকিত বিরাট্ মুখ-বিবর উন্মুক্ত করিয়া হনুমান সিং গায়িতেছিল—
“দে নয়নমে তালা লাগায়ে—”
অনেক কষ্টে, দরোয়ানকে অনেক খোশামোদের পরে, তবে কুবের ভবেশের দেখা পাইল। ভবেশ, তখন একখানা আরাম-কেদারায় আড় হইয়া পড়িয়াছিল, তাহার বামহাতে একখানা ইংরাজী খবরের কাগজ, আর ডানহাতে অঙ্গুলধৃত একটি ইজিপ্সিয়ান সিগারেট। সামনের মার্ব্বেল টেবিলে রৌপ্যনির্ম্মিত পাণের ডিবা ও ‘অ্যাশট্রে’।
ঘরখানি য়ুরোপীয় কায়দায় সাজানো। গডফ্রে সিল্কের ভিত্তি-প্রচ্ছাদনী দিয়া দেওয়ালগুলি অলঙ্কত, শার্শির কাঁচে-কাঁচে রঙিন্ নিসর্গ-ছবি। জানালায় জানালায় পুঁতির পর্দ্দা। চারিদিকে রুবেন, কনষ্টেবল, রোম্নি, রেনল্ডস, ল্যাণ্ডসিয়র ও গেনস্বরো প্রভৃতি ওস্তাদ-শিল্পিগণের চিত্র-প্রতিলিপি। ঘরের কোণে কোণে লাঅকোঅন ও ভিনাস ডি মিলো প্রভৃতির প্রস্তর-মূর্ত্তি এবং আশেপাশে নানাধরণের সুখদ গদীমোড়া অসংখ্য চেয়ার, চীনামাটীর টবে করিয়া জাপানী “বামন গাছ” ও চিত্রিত বস্ত্রাবৃত মেজ।
ভবেশ প্রথমটা কুবেরকে চিনিতে পারে নাই। তারপর, যখন চিনিতে পারিল, তখন সহজস্বরে ডাকিল, “কে ও, কুবের নাকি? এস, এস, ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?”
কুবের সঙ্কোচের সহিত ধূলি-মলিন অনাবৃত পদে মূল্যবান্ কার্পেটের উপর পদচিহ্ন আঁকিয়া, ভবেশের সামনে গিয়া চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।