সম্মুখের ভিত্তিবিলম্বিত প্রকাণ্ড দর্পণে তাহার মুর্ত্তি বিম্বিত হইল। সেদিকে নজর পড়াতে সে-যেন আরও সঙ্কুচিত হইয়া পড়িল। ভাবিল, তাইত’, এখানে আসিয়া কি অন্যায় কাজই করিয়াছি! এই সাজানো ঘরে আমাকে কি-রকম বে-মানান্ দেখাইতেছে!
ভবেশ বলিল, “কিহে, অমন করে জুজুর মত দাঁড়িয়ে রৈলে কেন? একি! তোমার পায়ে ন্যাক্ড়া বাঁধা যে? হয়েচে কি?
“কেটে গেছে।”
মিথ্যাকথা! তার জুতা ছিঁড়িয়া গিয়াছিল,—আবার যে নূতন জুতা কেনে, এমন পয়সা নাই। ধনী বন্ধুর বাড়ীতে না আসিলে নয়,—অথচ ভদ্রতার খাতিরে খালিপায়েও আসিতে পারে না। কাজেই পায়ে বস্ত্রখণ্ড বাঁধিয়াছিল। লোকে ভাবিবে, ক্ষতের ভয়ে পায়ে জুতা নাই।
ভবেশ বলিল, “ঐ চেয়ারে বসো। স্কুল ছেড়ে এই প্রথম তোমার সঙ্গে দেখা হল; এস, দুটো কথাবার্ত্তা কই।”
পুরাণো বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনের জন্য ভবেশ কথায় আগ্রহপ্রকাশ করিল বটে, কিন্তু তার মুখ সম্পূর্ণ ভাবশূন্য। তার মুখ দেখিয়া বুঝিবার জো নাই, যে, সে আনন্দিত কিংবা বিরক্ত ৷
কুবের চেয়ারের উপরে আড়ষ্টভাবে বসিয়া বলিল, “কেমন, ভাল আছত, ভবেশ!” বলিয়াই, তার মনে হইল, এতক্ষণ পরে হঠাৎ এই কুশল-জিজ্ঞাসাটা বড়ই বেখাপ্পা হইয়া গেল।
ভবেশ সিগারেটের দগ্ধাবশেষটা অবহেলাভরে ‘অ্যাশ্ট্রে’র উপরে নিক্ষেপ করিয়া বলিল, “অমনি চলে যাচ্ছে দাদা! কিন্তু তোমায় অমন শুক্নো শুকনো দেখাচ্ছে কেন?”