পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 ভবেশের অগোচরে, আপনার পরোনের কাপড়ের ছোঁড়া-দিকটা ঢাকা দিতে-দিতে ম্লানমুখে কুবের বলিল, “পেটের ধান্ধায় ভাই, পেটের ধান্ধায়! আমার অবস্থা, তুমি এই স্বর্গে ব’সে কল্পনাও কর্ত্তে পার্ব্বে না।”

 কুবেরের কথার ভঙ্গী শুনিয়। ভবেশ একটু গম্ভীর হইয়া বসিল। তারপর চোখ বুজিয়া একটা ‘হাই’ তুলিয়া, হাতে তুড়ি দিতে-দিতে জড়িত কণ্ঠে বলিল, “আচ্ছ! কুবের, এতদিনপরে এ অধীনকে হঠাৎ স্মরণ হ’ল কেন?”

 কুবের, এ-রকম প্রশ্নের প্রত্যাশা করে নাই। একটু থতমত খাইয়া মনে মনে ভাবিল, কি বলি? আমার আসার উদ্দেশ্যটা সরলভাবে খুলিয়া বলিব? না, না, যখন এসেছি, তখন একটু পরেই না হয় সকল কথা বলা যাবে। কথাটা এখনি পাড়্‌লে, বড় খারাপ শুনাবে।

 প্রকাশ্যে বলিল, “কেন ভাই, বন্ধু’র কাছে কি আসাটাও নিষিদ্ধ?”

 ভবেশ একবার তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে কুবেরের দিকে চাহিল। তারপর, একটা রূপার ছোট শলা দিয়া দাঁত খুটিতে-খুটিতে কহিল, “সে কি কথা,—তুমি এক্‌শোবার আস্তে পার, এখানে তোমার অবারিত দ্বার। ভাই, বন্ধু যদি বন্ধুর কাছে না আস্‌বে, তাহলে মানুষ কি বাঁচ্‌তে পারে? জগতে বন্ধুত্বের মত জিনিষ আর কি আছে? তোমরা রোজ আসবে, হুটো আমোদের কথা বলবে, দুটো সৎপরামর্শ দেবে, আমার বাড়ীকে তোমার নিজের বাড়ী মনে কর্ব্বে, —আমি ত’ এই চাই। কিন্তু এ-রকম বন্ধু আজকালকার বাজারে মেলা ভার। এই দ্যাখনা,—কাল একটা লোক এল,—ছেলেবেলায় কবে বুঝি তাঁর সঙ্গে পড়েছিলুম! আমার

৯২