কাছে এসে সেই পরিচয় দিয়ে বল্লেন, তাঁর অবস্থা নাকি বড় খারাপ হয়েচে,—কিছু টাকা চাই। কি আর করি, দিলুম পাঁচটা টাকা! আচ্ছা বলদিকিন্ ভাই, এরকম বন্ধু কে চায়? আরে কেও, —রাজচন্দ্র যে! সেদিন বাজী জিতে ভারি পালিয়েছিলে, আজ এসত চাঁদ! একহাত থেলা যাক, দেখি কে হারে কে জেতে!”
কুবের পিছন ফিরিয়া দেখিল, ঘরের ভিতরে একজন নূতন লোক আসিয়াছে। একেত’ ভবেশের বক্তৃতার চোটে তাহার ‘তাগ’ লাগিয়া গিয়াছিল, তারপর এই তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাবে সে একেবারে জড়সড় হইয়া পড়িল।
রাজচন্দ্র বিনাবাক্যব্যয়ে দাবার ছক পাড়িল। কুবের উঠিয়া মৃদুকণ্ঠে কহিল, “আজ তাহ’লে আসি’ ভবেশ!”
ভবেশ উঠিয়া দাঁড়াইয়া, কোঁচাটা দুই-একবার ঝাড়িয়া, দাবার ছকের দিকে তাকাইয়া বলিল, “এরি মধ্যে! কিছু জলটল খেয়ে যাও!”
‘না ভাই, আজ মাফ করো,— সে আর একদিন হবে অখন।” বলিয়া, কুবের তাড়াতাড়ি প্রস্থান,—একরকম পলায়নই করিল।
ভবেশ ‘বোড়ে’ সাজাইতে সাজাইতে গমনশীল কুবেরের দিকে অপাঙ্গে চাহিয়া, তাহার অগোচরে বিদ্রূপের হাসি হাসিল।
রাজচন্দ্র কহিল “লোকটা কে হে?”
‘ভবঘুরে—আর কি?”
“এখানে কি কর্ত্তে এসেছিল?”
দাবার সামনের ‘বোড়ে’ টিপিয়া ভবেশ বলিল, “মধুর লোভে। তা এমন হুল ফুটিয়েছি, বাছা আর এ-মুখো হবেন না।”