পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা


 রাস্তায় আসিয়া, কুবের যেন হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিল। এই বাল্যবন্ধু! ইহারই আশায় সে এখানে আসিয়াছিল? আসিয়া কি দেখিল? বড়মানুষী আর উদাসীনতা! আবার বলে কিনা, ‘জল খেয়ে যাও!’—কি পরিহাস!

 খানিকদূর গিয়াই সে হঠাৎ থমকিয়া দাঁড়াইয়া পড়িল। ভাবিল, কোথাই যাই? বাসায়? কেন? কোন্ আকর্ষণে? স্ত্রী আমায় ভালবাসে না, দেখিলেই কটু বলিবে; ছেলে-মেয়ের পেটে ভাত নাই,— ক্ষুধায় তাহারা ক্রন্দন করিবে। দুই অসহ্য! তবে?—

 ভাবিতে ভাবিতে, সে আবার চলিতে সুরু করিল। ভাবিল, জীবনে যার কোন লক্ষ্য নাই, মায়া নাই, সান্ত্বনা নাই,—কোন্‌দিকে যাইবে, এ ব থা সে কেন ভাবে?

 দেখিল, সন্ধ্যা হইয়াছে, আলোর মালা পরিয়া নগর হাসিতেছে। পথে লোক, আর লোক, আর লোক,—কি জনতা! সবাই হাস্যমুখ, সবাই সুখী! হাসিবে না কেন? ঘরে তাদের স্নেহশীল পিতা, যত্নপরায়ণা মাতা, সেবাতৎপর। ভগ্নী, প্রেমবর্তী পত্নী! সবাই হাসে,—হাসিবে না কেন?

 দেখিল, দিনমজুরেরা কাজের বোঝা ফেলিয়া নিশ্চিন্তপ্রাণে ঘরে ফিরিতেছে; মুখে তাদের আসন্ন অবসরের মধুর আনন্দ-আমোদের উচ্ছ্বাস! হা ভগবান্, ঐযে ভিখারী ভিক্ষা মাগিতেছে, ওর কাতরতার পিছনেও শান্তির আরাম আছে—ওর ঘরেও হয়ত’ শিশুর কান্না নাই ঈশ্বর! কেন আমায় পৃথিবীতে পাঠাইলে? পাঠাইলে ত, কেন ভদ্রঘরের ছেলে করিয়া, জীবনকে আমার তপ্ত অভিশাপে পরিণত করিলে? ওগো

৯৪