পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

আমি যদি মজুর হইতাম! আমি যদি ভিখারী হইতাম! না, তা ত’ নই! আমি ভদ্রলোক! মজুরী করিলে আমার যে অপমান! ভিক্ষা মাগিলে, আমার যে মাথা কাটা যাইবে! ধিক্!

 দেখিল, কুচরিত্রা স্ত্রীলোকের বাড়ীগুলি লোকে-লোকারণ্য! সেখানে গানের মূর্চ্ছনা, নূপুরের রিঞ্জনা, বাজনার ব্যঞ্জনা! পথ কাঁপাইয়া, দীনকে চাপা দিয়া, মৃতকে জাগাইয়া জুড়ী গাড়ীর পর গাড়ী আসিতেছে; মাথায় টেড়ী, চোখে চষমা, গলায় হীরার বোস্তাম্, বুকে সোণার চেন, হাতে ছড়ী, আঙ্গুলে আংটী, পরোণে মিহি কাপড়, পায়ে মকমলের পম্প্‌—বাবুর পরে বাবু গাড়ী হইতে নামিতেছেন, বাড়ীর উপরে উঠিতেছেন, উচ্চকণ্ঠে হাসিতেছেন, ঝমাঝম্ টাকা ফেলিতেছেন!

 চারিআনা পাইলে আজ আমাদের প্রাণ বাঁচে, আর ওরা কিনা মিথ্যা, ঘৃণিত আমোদের জন্য, পাপকে প্রশ্রয় দিবার জন্য, অর্থকে ব্যর্থ করিবার জন্য, অবহেলায় টাকা উড়াইতেছে! বিশ্ব কি ওদের জন্য,— আমি কি কেউ নই, আমার কি কোন অধিকার নাই? আমরা কি এক আকাশের তলায় বাস করি না, আমরা কি এক প্রাণবায়ু গ্রহণ করি না, আমরা কি একই হাতের গড়া নই! হারে জগৎ!

 নাঃ! আর ভাবিতে পারি না—এ ভাবনা, গভীর, অকূল, অসীম! কুবের হঠাৎ দাঁড়াইল। সাম্‌নে ও কি দেখা যায়?

 গঙ্গা! গঙ্গা! তরঙ্গবলয়িতা, সঙ্গীতোচ্ছ্বসিতা, জ্যোৎস্নাধবলিতা গঙ্গা! তাঁহার উল্লোলনৃত্যের ছন্দে ছন্দে ভক্তসমর্পিত পুষ্পমাল্য মৌন উল্লাসে নাচিয়া উঠিতেছে এবং সঙ্গে-সঙ্গে স্তম্ভিত অম্বরের প্রতিবিম্ব বুকের উপরে শতধা হইয়া যাইতেছে।

৯৫