পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 সিকতাশয়নে শীতল কর বুলাইয়া, জলবেণী দুলাইয়া ধীরে ধীরে লীলায়িত গতিতে ফেণবিভূষণা সলিলরূপিণী মা আমার, বহিয়া যান আর বহিয়া যান, সাগরপানে বহিয়া যান!

 “পতিত-পাবনী, তোর কোলে এ অভাগাকে ঠাঁই দে মা, সব জ্বালা জুড়িয়ে যাক্।”

 কুবের প্রাণ ভরিয়া গঙ্গাজল পান করিল,—তার সকল ব্যথা যেন পলকে দূর হইয়া গেল।

 ঘাটে জনমানব নাই। ভিজা মাটীর উপরে হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া, কুবের এক্‌লা একমনে গঙ্গাকে দেখিতে লাগিল। দূরে শ্মশান। নিশীথ রাত্রি এবং গভীর অন্ধকার! সেই অন্ধকারে চিতার আগুন জ্বালাইয়া পরলোকের পথে অদৃশ্য যাত্রীরা যেন নিরুদ্দেশ যাত্রায় চলিয়াছেন!

 সহসা সুদূরের নৌকায় মেঠোসুরে কে গান ধরিল:—

“মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে
আমি আর বাইতে পাল্লাম না।
সারা জনম বাইলাম বৈঠারে
ও তোর মনের নাগাল পালাম না।”

 কি উদাস গান—কি হতাশসুর! সে সুরের ভিতরে প্রতিকথায় যেন কোন তাপিত প্রাণের নিখিল সমর্পণের স্বর ফুটিয়া উঠিতেছে এবং তাহার সঙ্গে গঙ্গাও যেন সলিলহস্তে কুবেরের দেহস্পর্শ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ওরে আয়, ওরে আয়! দুঃখ ভুলিবি ত আমার কোলে আয়! ওরে, আয় রে বাছা, আয়!”

 কুবেরের মনও যেন সেই আহ্বানে সাড়া দিয়া উঠিল। উদ্‌ভ্রান্তের

৯৬