পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

মত সে গঙ্গাকূলে উপুড় হইয়া পড়িল। সেখানে মাটীর ভিতর হইতেও যেন সেই আহ্বান সে কান পাতিয়া শুনিতে পাইল! “ওরে, আয় রে বাছা আয়, আমার কোলে আয়!”

 হঠাৎ সে সোজা হইয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। ভাবিল, ঠিককথা। আমার ত বাঁচা-মরা দুই সমান!

 সংসার আমাকে ঠেলিয়াছে, আমিও কেন এই অতলে সব বোঝা নামাইয়া দি না? জীবনে শান্তি পাইলাম না, দেখি, মরণে পাই কিনা?

 সে জলে নামিল,—ক্রমে, আরও—আরও বেশী জলে। তার কোমর ডুবিল, বুক ডুবিল, গলা ডুবিল, মুখ ডুবিল, —তারপর, আঁধার-আঁধার!

 নাঃ! বড় অন্ধকার গো! বড় গভীর! ভয় করে!

 সে আবার ভাসিয়া উঠিল, সাঁতারিয়া আবার তীরে ফিরিয়া আসিল। তারপর একট। ‘জেটি’র উপরে উঠিয়া, আপনার ভিজা দেহকে সটান ছড়াইয়া দিল। তার মরা হইল না। সে চোখ মুদিল। এবং ঘুমাইয়া পড়িল।

 কতক্ষণ ঘুমাইল, সে তা জানে না।

 হঠাৎ তাহার মনে হইল, কে যেন তাহাকে ধাক্কা দিতেছে। ধড়্‌মড়্‌ করিয়া, সে উঠিয়া বসিল। দুইহাতে ঘুমঝাপ্‌সা চোখদুটি কচ্‌লাইয়া ঊর্দ্ধদৃষ্টিতে চাহিল,—চাঁদ পশ্চিম আকাশে।

 হঠাৎ পাশ হইতে কে জড়িতম্বরে কহিল, “কি বাবা কুম্ভকর্ণ, ঘুম কি ভাঙ্গল?”

৯৭