অত্যন্ত চমকিয়া, পাশের দিকে চাহিয়া কুবের দেখিল, আসনপিঁড়ি হইয়া একটা লোক আদুড় গায়ে সেখানে বসিয়া আছে। তাহাকে চিনিতে না পারিয়া, সে অবাক্ হইয়া তাহার দিকে চাহিয়া রহিল।
লোকটা বিকট হাস্য করিয়া বলিল, “কি বাপ্ধন, চিন্তে পার্চ না, কিন্তু আমি তোমায় চিনেচি। তুমি আমারি মত একটা ভবঘুরে। কি বল? নইলে বাবা, এখানে এমন করে ঘরদোর ছেড়ে পড়ে আছ চাঁদ! আমি কে জান? আমার পরিচয়, এই!”
সে একটা জিনিষ উঁচু করিয়া, কুবেরের চোখের সামনে তুলিয়া ধরিল, সেটা মদের বোতল!
“মাতাল!” কুবেরের মুখ দিয়া আচম্কা কথাটা বাহির হইয়া গেল। সে সভয়ে উঠিয়া দাঁড়াইল, কিন্তু লোকটা খপ্, করিয়া কুবেরের হাত চাপিয়া ধরিল। কহিল, “হুঁ”, আমি মাতাল। আমি চোর নই, জোচ্চর নই, আমি খুনে নই, বিশ্বাসঘাতক নই,—আমি মাতাল। দুনিয়ার সবাই আমাকে ঠেলে দিয়েছে, তাই আমি মাতাল! যন্ত্রণা আর সইতে না পেরে আমি মাতাল! এক্লাটি এখানে ব’সে মদ খাচ্ছিলুম, তোমাকে দেখে ভাব্লুম, যাহোক একটা সঙ্গী জুটে গেল। ব’স, ব’স,—পালিও না— ভয় পাও কেন বন্ধু!”
কুবের আপনার হাত টানিয়া ঘৃণাভরে বলিল, “ছাড়, ছাড়,—আমি মদ খাই না!”
“মদ খাও না?”
“না। আমার ছেড়ে দাও,— আর জ্বালার ওপর জ্বালা দিও না, সারাদিন আজ খাওয়া হয় নি, মাথার ভেতরে আমার আগুন জ্বল্চে।”