পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

 “আগুন নেবাও দাদা, আগুন নেবাও! এই মদ একটু মুখে ঢেলে দাও, আর দেখবে বুকের আগুন সব নিবে গেছে।”

 মাতালের কথাগুলি সমবেদনায় ভরা! এমন আপনজনের মত কথা সে অনেকদিন শোনে নাই। সে আর চলিয়া যাইবার জন্য চেষ্টা করিল না,—আস্তে আস্তে বলিল, “মদে কি প্রাণের কষ্ট যায়?”

 “যায় না? বল কি ভাই! এই মদ আছে তাই বেঁচে আছি। নাও, ঢোক্‌ ক’রে এই এক গেলাস গলায় ঢেলে দাওদিকিন্!”

 মাতাল, পাত্রটা আগাইয়া দিল। কুবের অভিভূতের মত দেখিল, পাত্রভরা তরলধারা ঢল ঢল করিতেছে,—লইব, কি, লইব না? এখনও আমি সুচরিত্র। গরীব হইয়া, অনাহারে থাকিয়া, এখনও আমার চরিত্রকে মলিন হইতে দিই নাই,—আর আজ—

 “কি বন্ধু! নাও—”

 “না, না।”

 “সেকি!”

 “না, না—ঘরে আমার স্ত্রী-পুত্র আছে, আজ তাদের অন্ন জোটে নি। আমি যদি মাতাল হই, তাহলে তাদের কে দেখবে? তারা কি খাবে?”

 “তুমি মাতাল না হয়েও, তাদের কি ভাল কর্ত্তে পেরেচ, ধন!”

 কুবের ভাবিল, তা বটে!

 “নাও হে নাও, জুড়িয়ে গেল! আমার কেমন যে বদ্-স্বভাব, একলা এক্‌লা মদ খেতে পারি নি!—নৈলে, তুমি খেলে না খেলে—আমার কি! নাও, চোখ-মুখ বুজে দাও-একটা চুমুক্‌! দেখবে দেহের মধ্যে যতটুকু এই সুধা যাবে ততটুকু খালি শান্তি!”

৯৯