লোলুপ—অথচ সভয়নেত্রে, কুবের পাত্রের দিকে চাহিয়া জড়িত জিহ্বায় বলিল, “সত্যি বল্চ, মদ খেলে কোন জ্বালা থাকে না?”
“একদম না। বিশ্বেস না হয়, খেয়ে দেখ। কার জন্যে তুমি ভেবে মর্চো? তোমার মুখ কে চায় দাদা!”
সত্য! আমার মুখ কে চায়? আমি মাতাল হই আর না হই-তার জন্যে কার মাথাব্যথা? তবে আমিই বা মিছা কেন ভাবিয়া সারা হই?
কুবের কাঁপিতে-কাঁপিতে সুরাপাত্র ধরিল। চোখ মুদিয়া, আপনার শুষ্ক, বিবর্ণ ওষ্ঠের কাছে পাত্রটা তুলিল। তারপর, ধীরে ধীরে কহিল, “কি বল, খাই তা হ’লে—”
“হুঁ হুঁ—সোণারচাঁদ আমার!”
কুবের, পাত্রটা ওষ্ঠপার্শ্বে উপুড় করিয়া দিল,—সেই বিশ্ববিজয়িনী রক্তধারা তাহার উদরস্থ হইল এবং সেইসঙ্গে তাহার অসাড় হস্ত হইতে পাত্রটা স্খলিত হইয়া, সশব্দে পড়িয়া গেল।
“ছিঃ ছিঃ, এ কি করলে?” তার মনের ভিতর হইতে কে যেন এই ধিক্কার-বাক্য উচ্চারণ করিল।
অত্যন্ত বিমর্ষ হইয়া, কুবের স্তব্ধভাবে জ্যোৎস্নামাখা অল্পঅস্পষ্ট গঙ্গার চঞ্চল স্রোতের দিকে্ তাকাইয়া রহিল।
মাতাল, আর এক পাত্র গলায় ঢালিয়া দিয়া গান ধরিল:—
“আনন্দময়ী হয়ে গো মা,
আমায় নিরানন্দ ক’র না—”