পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন যুদ্ধে

 গঙ্গার সুনির্জ্জন তটে, নীরবতার মাঝে সে সঙ্গীত বড় গম্ভীর শুনাইল। কুবের কান পাতিয়া গান শুনিতে লাগিল,—তাহার প্রাণমন যেন ভরিয়া উঠিল।

 গান থামিল। কুবের আস্তে আস্তে কহিল, “তুমি কে?”

 “বল্লুম ত, তোমারি মত এক হতভাগা।”

 “তোমার কেউ নেই?”

 “ছিল। সব ফাঁকি দিয়ে পালিয়েচে! থাক্‌বার মধ্যে আছি এখন আমি, আর এই বোতলটা। কিন্তু, তুমি কে?”

 “শুনবে?”

 “শুনবো বলেই ত জিজ্ঞেস কর্‌লুম।”

 দরদের দরদী সবাই চায়। কুবেরও চাহিত, কিন্তু পাইত না। আজ বুঝি পাইয়াছে। এমন করিয়া আর কেহ কখনও তাহাকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করে নাই। তাই সে, প্রাণ খুলিয়া আপনার সকল দুঃখের কথা, এই অপরিচিতের কাছে প্রকাশ করিয়া বলিল।

 মাতাল নীরবে সমস্ত শুনিল। তারপর, নিজে একপাত্র মদ্যপান করিয়া, কুবেরের সুমুখে পাত্রটা আবার ভরিয়া, তুলিয়া ধরিল!

 কুবের ভয়ে-ভয়ে বলিল, “আবার!”

 মাতাল কহিল, “হু—আবার! খাও, তোমার কথা শুনে বুঝলুম্— এ ভিন্ন তোমার দ্বিতীয় গতি আর নেই। আর একটু খাও, মাথা পরিষ্কার হবে। তখন সাফ্‌ বুঝ্‌বে, এই পৃথিবী তৈরি করাটা মস্ত একটা তামাসা! এখানে গরীবের ঠাঁই নেই বাবা,—তাকে থেৎলে বড়মান্‌ষের হাতী হামেসাই চলে যাচ্ছে। গরীবের মা-বাপ নেই। সে ·

১০১