পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

বাঁচ্ল কি মর্‌ল কেউ দেখ্‌বে না। দেখ্‌ত, যদি তার টাকা থাক্‌ত! তা ত নেই! টাকাগুলি যে সব ধনীর সিন্দুকে। এই যে চাঁদ, দেশে এত লেক্‌চারের তুব্‌ড়ী, এই যে কামরূপে কাক মর্‌লে কাশীধামে হাহাকার ওঠে,—কিন্তু বাপ্‌ধন, আমরা গরীবেরা যে রোগে আর অনাহারে, ভুগে আর শুকিয়ে তিলে তিলে মর্‌চি, আমাদের একবার খোঁজটাও কেউ নিতে পার না! আরে ছোঁঃ! সব ভেল্ বাবা, সব ভেল্! কিছু ভেব না,—যত ভাব্‌না, তত কান্না,—দিন আপনি যাবে,—না যায়, মদ খাও! যতদিন না ওপারে গিয়ে ঠেক্‌চ, মদের গেলাসে দাও চুমুক্‌,—মস্ত জীবনটা এক্কেবারে ছোট্ট হয়ে যাবে!”

 কুবের আর আপত্তি করিল না,—নীরবে মদ্যপান করিল।

 হঠাৎ মাতাল তাহার হাত ধরিয়া টানিল; তারপর মৃদুস্বরে বলিল, “দেখ, একটা কথা বলি। টাকার জন্যে যা খুসি করো, কেবল বড়মান্‌ষের কাছে যেও না। গেলে হয় গলাধাক্কা পাবে,— নয় জাঁক দ্যাখাবার জন্যে তারা তোমায় তাচ্ছিল্যের সঙ্গে একটু দয়া কর্ব্বে। ভাল মনে টাকা দেবে, তোমার দুঃখে কাতর হয়ে টাকা দেবে,—এমন বড়মানুষ এখন আর পাচ্চ না। বুঝ্‌লে বাবা, বড়মান্‌ষের ছায়া মাড়িও না— তারা ধাঙড়্‌। ছুঁলে নাইতে হয়।”

 একটু ইতস্ততঃ করিয়া মাতাল আবার কহিল, “দেখ, কারুকে বোল না,—আমার ট্যাঁকে বিশেষ কিছু থাকে না,—তবে আজ গোটা তিনেক টাকা আছে দেখ্‌চি, তুমি নাও।”

 কুবেরের নেশা হইয়াছে। কিন্তু তখনও তার বোধশক্তি বেশ প্রথর। সে আধ-ঘুমন্ত, আধ-জাগন্তের মত মাতালের দিকে চাহিল,—তাহার মনে

১০২