পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

আর খাব, খাব আর ঢাল্‌ব! সংসার যাক্ ভেসে,—কে কার বাবা? চোখ, বুজ্‌লেই অন্ধকার—যতক্ষণ চেয়ে আছি—মদ, খালি মদ, খালি মদ চাই!

 “বাবা!”—কুবেরের ছেলে আসিয়া কাতরস্বরে ডাকিল। দুধের ছেলে,—ভাল করিয়া এখনও কথা ফোটে নাই। এই বয়সে অনাহারে অযত্নে তার চোখ্‌ বসিয়া গিয়াছে, পেট পড়িয়া গিয়াছে ৷

 “বাবা?”

 “কি চাস্‌?”

 “বাবা গো, ক্ষিদে!”

 “হুঁ”, ক্ষিদে! ওরে হতভাগা, আমায় খাবি; মদ খাবি?”

 “বাবা গো!”

 “চোপ্ রাও!”

 শিশু, ভয়ে এতটুকু হইয়া কাঁপিতে-কাঁপিতে পলাইয়া গেল।

 কুবের দাড়াইয়া দাঁড়াইয়া খানিকক্ষণ পলায়নপর পুত্রকে দেখিল। তাহার পর ছুটিয়া গিয়া তাহাকে ধরিল, — ধরিয়া কোলে তুলিয়া নিল।

 “ওরে যাদু—ওরে খোকা! আমি তোর বাপ নই! বাপ হলে, ছেলেকে খেতে দেবার ক্ষমতা থাক্‌ত। ভগবান্, মুখ তুলে চাও, দেখ, এখনও তোমার নাম ভুলিনি— এখনও তোমায় ডাক্‌চি!”

 খোকার বুকে মুখ রাখিয়া কুবের কাঁদিতে লগিল।

 কাঁদিতে-কাঁদিতে হঠাৎ কান্না থামাইয়া সে মুখ তুলিল। আপন মনে বলিল, “একি, কাঁদচি কেন? কাঁদলে কি মদ পাওয়া যায়? আরে দূর্—আরে দূর্! তুই আমার কোলে কেন? যাঃ—দুর্ হ!”

১০৫