পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

ও রাস্তা—এমনি লক্ষ্যহীনভাবে সারাদিন পথে-পথে ঘুরিয়া বেড়াইল। সন্ধ্যার আগে, তাহার শরীর একেবারে এলাইয়া পড়িল। সে আর চলিতে পারিল না। রাস্তার ধারে একটা বাড়ীর বিলাতী মাটীর ঠাণ্ডা রোয়াকের উপরে সে আস্তে-আস্তে দেওয়ালে ঠেশ্‌ দিয়া বসিয়া পড়িল। এবং সেই অবস্থায়, খানিক বসিয়া থাকিতে-থাকিতে তার চোখ ঘুমে ভারি হইয়া আসিল।

 তন্দ্রাটা সবে একটু ঘোরালো হইয়া আসিয়াছে, এমন সময়ে হঠাৎ কে তাহার গলা ধরিয়া একটা প্রবল ঝাঁকানি দিয়া দিল। অত্যন্ত চমকিয়া কুবের চাহিয়া দেখিল, তাহার সামনে লালপাগ্‌ড়ীর মটুক্ পরিয়া, কালো দাড়ীর মেঘে চক্‌চকে দাঁতের বিদ্যুৎ খেলাইয়া, এক কনষ্টেবলের মূর্ত্তি! সংপ্রতি পাড়ায় উপরি-উপরি কতগুলি চুরি হওয়াতে উপরওয়ালার কাছে ধমক খাইয়া, পাহারাওয়ালাজী, সুচতুর চোরের উপরে বড়ই বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন! কাজেই, কুবেরকে এখানে, এমনভাবে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া, তাঁহার মনে সন্দেহ হইল, ইহার মৎলব নিশ্চয় খারাপ! অতএব, তিনি মহাবিক্রমে হতভাগ্য কুবেরের ঘাড়্‌ পরিয়া তাহাকে রোয়াকের উপর হইতে নামাইয়া দিয়া, সহরের যাবতীয় চোরের উদ্দেশে এমন কতগুলি সুমধুর শব্দপ্রয়োগ করিলেন, যাহা কোন অভিধানে পাওয়া যায় না বা ভাষায় লিখিয়া দশজনকে তাহা শুনাইতে গেলেও ভদ্রসমাজে লেখকের “কল্‌কে” পাওয়া দায় হইয়া উঠিবে!

 “ভগবান, গরীবের— ঘরেও জ্বালা, পরেও জ্বালা, এ জীবন নিয়ে কি কর্ব্ব তবে? কোথা যাব? ওঃ! আর পারি না—আর পারি না- তবু প্রাণ যায় না! ছার প্রাণ!”

১০৭