দাঁড়াইল। বড়-বড় ডাগর চোখে অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহাকে দেখিয়া, সে আবার কথা কহিল, “ভিখিলি, তোমাল কি হয়েছে?”
কি মিষ্ট কথা!
অন্য সময় হইলে, কুবের হয়ত এই অবোধ শিশুর কথা তুচ্ছজ্ঞান করিত,—কিন্তু তখন তাহার পাত্রপাত্রীর ভেদজ্ঞান মোটেই ছিল না! উচ্চস্থান হইতে পতনকালে, মানুষ দুহাত বাড়াইয়া শূন্যকেও জড়াইয়া ধরিবার চেষ্টা করে।
অতএব ক্ষীণকণ্ঠে কুবের কহিল, “আমি খেতে পাই নি।”
“পয়তা নেবে?”
“নেব।”
সে ছুটিয়া বাড়ীর ভিতরে ঢুকিল। কুবের দেখিল, তাহার গলার কি চক্-চক্ করিয়া উঠিল। কি ওটা? হার? সোণার হার!
তাহার মুখ বুকের উপরে ঝুঁকিয়া পড়িল।
সকল মানুষেরই বুকের একদিকে ভগবান্ আর একদিকে সয়তান থাকে। একদিকে সৎবৃত্তি, আর একদিকে পিশাচবৃত্তি। কঠিন সমাজশাসনে, শিক্ষাগুণে, সৎবৃত্তির অনুশীলনে, সেই পিশাচবৃত্তিগুলি সাড়া দিবার ফাঁক্ পায় না।
কিন্তু “অবস্থাভেদে মানব পশুমাত্র।” চারিদিকে যার অভাব, তার সৎস্বভাব জলের আল্পনার মত পুঁছিয়া যায়, এবং সেইসঙ্গে মনের জ্ঞান-প্রদীপও নিবিয়া যায়।
কুবেরের মনের আলো এখন নিবিয়াছে। অন্ধকারে সেখানে সয়তান জাগিয়াছে।