মাথাহেঁট করিয়া, সে ভাবিতে লাগিল, “সোণার হার! সোণার-! কত দাম? কুড়ি টাকা? পনেরো টাকা? দশ টাকা? হুঃঁ! দশ টাকা এখন যদি পাই, কি করি? আগে মদ কিনি। তারপর! বাড়ীতে কিছু দি! ছেলে-মেয়ে খেতে পায় নি। তারা কাঁদ্চে, হয়ত মরে গেছে। মরে গেছে? আশ্চর্য্য কি? সোণার হার!
কুবের চারিদিকে চাহিয়া দেখিল। কেউ কোথাও নাই। ঐযে,— মেয়েটা আস্চে না? বেশ মেয়েটি! দেখ্লে মায়া হয়।
হুঁ—মায়া! কিসের মায়া? আমাকে দেখে কেউত মায়াদয়া করে নি! কিসের মায়া? ঐ যে,—
গলায় হারটা দুলচে। সোণার হার! নিয়ে যদি পালাই, কেউ দেখ্তে পাবে না।
না—না—না! কি চমৎকার মুখ! আমাকে দেখে ওর দয়া হয়েছে,— আর, আমি ওর ওপরে ডাকাতি কর্ব্ব? তা কি হয়! কিন্তু, আমি যে মরি—আমার স্ত্রী-পুত্র যে মরে! মদ না পেলে আমি বাঁচ্ব না,—খেতে না পেলে তারা বাঁচ্বে না। সোণার হার! কি করি? তাইত—কি করি?
এমন সময়ে মেয়েটি সামনে আসিয়া দাঁড়াইল। নির্ভয় মুখে তাহার সরল হাসির লীলা। ননীর মত একখানি নরম হাতে সে কুবেরের হাত ধরিয়া, অন্যহাতে একটি পয়সা দেখাইয়া, বাঁশীর মত মিঠে আধো-আধো স্বরে বলিল, “ভিখিলি,—মা পয়তা দিয়েতে।”
কুবেরের দৃষ্টি, হঠাৎ কঠিন হইয়া উঠিল। সে দৃষ্টি, কোন বুভুক্ষু শ্বাপদের মত ভয়ানক। সে প্রথমে শিশুর গলার হারের দিকে চাহিল।