পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

কি প্রদীপ্ত স্বর্ণ! তারপর তাহার চোখ, মেয়েটির চোখের উপরে পড়িল। কি নির্দ্দোষ দৃষ্টি! শিশুর কোমল চাহনির সামনে, বুঝি পাষাণেও দরিয়া বহে! সেই নিষ্পাপ, শুভ্র আত্মার মহিমার সুমুখে কুবেরের মনের কুভাব যেন লজ্জায় ম্রিয়মাণ হইয়া পড়িল। কিন্তু উপায় নাই—উপায় নাই! তাহাকে বাঁচিতেই হইবে, চুরি করিতেই হইবে! সে জোর করিয়া প্রাণপণে আপনার চোখ মুদিয়া রহিল। যেন শিশুর মায়াময় দৃষ্টি, তাহাকে তাহার সঙ্কল্প হইতে টলাইতে না পারে! তাহার পর হৃদয়ের চাঞ্চল্য দমন করিয়া, মনকে কঠিন করিয়া পলক-না-পালটিতে দুইহাতে সে, সেই স্বর্ণহার চাপিয়া ধরিল।

 ছোট মেয়েটির মুখ ভয়ে সাদা হইয়া গেল। সে কাঁদিয়া উঠিবার উপক্রম করিল।

 দন্তে-দন্ত ঘর্ষণ করিয়া কুবের চাপাগলায় কহিল, “চুপ্‌। কাঁদিস্‌নে। মেরে ফেলব—মেরে ফেলব।”

 মেয়েটি, আপনার মোমের মত নরম হাতদুখানি দিয়া তাহাকে জড়াইয়া ধরিল। তাহার কাপড়ের ভিতরে আপনার কচি মুখখানি গুঁজিয়া ফুপাইতে ফুপাইতে আধো-আধো স্বরে কহিল, “অ ভিখিলি, মাল্‌বে কেন ভাই, আমি তোমায় কত ভালবাতব—পয়তা দেব!”

 কুবেরের দম্ যেন আট্‌কাইয়া যাইবার মত হইল। থর্‌থর্ করিয়া কাঁপিতে-কাঁপিতে, মেয়েটির মুখের কাছে মুখ আনিয়া সে কহিল,“ভালবাস্‌বি? অ্যাঁ! বলিস্‌ কিরে?”

 “ভালবাতব—খুব ভালবাতব! আমায় মেল’ না ভাই।”

 “নাঃ!”

১১১