পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

আলোক-আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করিতেছে। পিছনে কারাগার, আপনার আন্ধিয়ার হৃদয়ের উপরে আবার রুদ্ধ লৌহ কবাটের আবরণ দিয়াছে। কুবের দুইহাতে আপনার চোখ কচ্‌লাইয়া ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, এইমাত্র সে-যেন একটা সুদীর্ঘ দুঃস্বপ্ন দেখিয়া জাগ্রৎ হইয়া উঠিয়াছে!

 সে চলিল। কারাগারের সংকীর্ণতায় তাহার প্রাণ যেন এতদিন জড় হইয়া, নিশ্চেষ্ট হইয়া পড়িয়াছিল। এখন সহসা এই অবাধ স্বাধীনতার ভিতরে, এই অজস্রবৃষ্ট সূর্য্যকরধারার মাঝে পড়িয়া আবার সে দেখিল, চারিদিকে নূতন জীবন, নূতন উদ্যম, নূতন উৎসাহ্,—আলো, আর গান, আর হাসি!

 সেই সংসার! সেই মানুষ! সংসারে তাহার বিতৃষ্ণা জন্মিয়াছিল, মানুষের উপরে তাহার ঘৃণা হইয়াছিল। কিন্তু আজ তাহার মনে হইতে লাগিল, এতদিন সে প্রবাসে, পরের কাছে পড়িয়া ছিল,—এই সংসার যে তাহার আপন ঘর, এই মানুষ যে তাহার আপন ভাই! আজ যেন বিশ্বের নিখিল আনন্দ, পুষ্পের নিখিল গন্ধ, সংসারের নিখিল ভালবাসা, শরীরী হইয়া তাহাকে আহ্বান করিতেছে!—নবলব্ধ মুক্ত স্বাধীনতার প্রেরণায় সে-যেন পাগল হইয়া উঠিল! ভাবিল, উচ্চে—আরও উচ্চে, ঐ যে নীলাব্জনীল নিথর আকাশ বিরাট্ অসীমতা এবং মৌনব্রত লইয়া অনাদিকাল ধরিয়া পড়িয়া আছে, সে যদি ইচ্ছা করে, তাহা হইলে, মাথার উপরকার ঐ অসীমতাকে এখনই আপনার মুঠোর ভিতরে চাপিয়া ধরিতে পারে! সে এখন স্বাধীন—সে এখন স্বাধীন!

 এখন কি করিব, কোথায় যাইব? কেন, আপন আলয়ে? যেখানে

১১৩