পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

 সরলার ভ্রাতার উদ্দেশে সে ছুটিল। কিন্তু সেখানে গিয়া শুনিল, সরলা সেখানে যায় নাই। তাহার ভ্রাতাও পরলোকে।

 সরলা—আমার ছেলে—আমার মেয়ে!

 কুবেরের মাথাটা যেন হঠাৎ কেমন গরম হইয়া গেল। দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া সে অনেক ভাবিল, —সরলা কোথায় গেল? মরিয়া গিয়াছে? তার ছেলে—তার মেয়ে? তারাও মরিয়াছে? সবাই মরিয়াছে? স্ত্রী-পুত্র—কন্যা,—ভগবান্—ভগবান্!

 কুবের পাগলের মত একদিকে ছুটিয়া চলিল। সংসার আবার অন্ধকার, ভীষণ, শূন্যতাপূর্ণ!

 যাইতে-যাইতে হঠাৎ দেখিল, পথের ধারে শুঁড়িখানা।

 নিরাশায় আবার তাহার প্রাণে সয়তান জাগিল। এতক্ষণ সে ছিল, মুক্ত তুরঙ্গের মত! এখন, যেন কোন অজ্ঞাতকরধৃত অদৃশ্য রজ্জু, তাহাকে এক বিপুল অন্ধকারের দিকে আকর্ষণ করিয়া লইয়া যাইতে লাগিল। কুবের, আত্মসংযম করিতে পারিল না। একটুও আগুপিছু না ভাবিয়া মন্ত্রমুগ্ধের মত, সে বরাবর মদের দোকানের ভিতর গিয়া দাঁড়াইল। হাতে ‘জেলার’ সাহেবের দেওয়া সেই কুড়ি টাকার নোট। ভাবিল, মদ খাই—সব দুশ্চিন্তা দূর হইবে।

 সমস্তদিন সে, মদের দোকানে একদল মাতালের সঙ্গে পড়িয়া রহিল। মদ খাইয়া, পৈশাচিক আনন্দে ডুবিয়া, সে সকল দুর্ভাবনা ভুলিল।

 সন্ধ্যার আগে, দলের একটা মাতাল কহিল, “খালি মদে বাবা, ফুর্ত্তি হয় না। দু’চারখানা মিঠে গলার গান, তার সঙ্গে নাচ আর তবলায়