পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-যুদ্ধে

 হঠাৎ, কে-যেন চুলের মুঠি ধরিয়া কুবেরের হেঁট্‌করা মুখ সিধা করিয়া দিল। কে ডাকে,—এ কার গলা? তাহার উদ্‌ভ্রান্ত দৃষ্টি রমণীর সহিত মিলিয়া স্থির হইল—ক্ষণিকের জন্য। এক পলকের ভিতরে তাহার মুখের মাংসপেশীর বিবিধরূপ পরিবর্ত্তন হইল। এবং পরপলকে তাহার মাথা, মড়ার মত কাঁধের উপরে ঝুলিয়া পড়িল।

 রমণীও প্রথমে বজ্রাহতের মত স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইল। তাহার পর; দুহাতে প্রাণপণে আপনার মুখ ঢাকিয়া, বেগে পলায়ন করিল। যেন, সে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে দেখিয়াছে।

 কুবেরকে দাঁড়াইয়া পড়িতে দেখিয়া, একজন তাহার গা-ধরিয়া নাড়া দিয়া কহিল, “ও হে, দাঁড়িয়ে পড়্‌লে যে! চল না!”

 তাহাদের ডাকে কুবের শিহরিয়া উঠিয়া মুখ তুলিল। একবার সামনের অন্ধকারের দিকে চাহিল। কিন্তু যাহাকে খুঁজিতেছিল, তাহাকে দেখিতে না পাইয়া, সে চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া-দাঁড়াইয়া যেন কি ভাবিতে লাগিল। যেন মনের ভিতরে, কি-একটা পুরাণো কথা হারাইয়া গিয়াছে, আর খোজ মিলিতেছে না। যেন স্মৃতির সূতা মাঝ্‌খানে কোথায় ছিঁড়িয়া গিয়াছে, আর জোড়া লাগিতেছে না!

 মাতালেরা হাঁকিল, “তুমি কি-রকম বদ্‌রসিক হে! যাবে, কি যাবে না বল?”

 সহসা উচ্চ, বিকট হাস্যে উচ্ছ্বসিত হইয়া কুবের চেঁচাইয়া উঠিল, “কোথা যাব,—সরলার বাড়ী? হাঃ হাঃ! সরলার বাড়ী!”

১১৭