দাঁড়াইল। প্রিয়নাথ খোকার গালে এক বিরাশি শিক্কা ওজনের চড় বসাইয়া দিয়া সক্রোধে কহিল, “পাজী ছুঁচো!” চড় খাইয়া খোকা মহা চীৎকার শুরু করিয়া দিল।
প্রিয়নাথ, রাগে গশ্-গশ্ করিতে করিতে যে ময়লা কাপড়খানা পরিয়াছিল, তারই উপরে একটা আধফর্শা টুইলের সার্ট চড়াইয়া দিল। সার্টের গায়ে তিনরকমের চারিটা বোতাম—একটা রূপার, একটা হাড়ের, দুটা কাঁচের। এক হাতায় বোতাম আছে, অন্যটা সূতা-দিয়া-বাঁধা। একখানি পাকানো ও কোচানো চাদর কাঁধে ফেলিল। পায়ে একযোড়া সাদা ক্যাম্বিসের গম্প জুতা পরিল— তার উপরে কালো বার্ণিশ চামড়ার তিন-চারিটা ছোট বড় অপারেশনের চিহ্ন। প্রিয়নাথ লোকটার সখ আছে —নাই শুধু পয়সা।
খোকা তখনও কাদিতেছিল। প্রিয়নাথ তাড়াতাড়ি তাহাকে কোলে তুলিয়া লইয়া, তাহার দুই গালে দুটি চুমো খাইয়া বলিল, “ছি বাবা, কেঁদ না, কাঁদতে নেই।”
সুরবালা স্বামীর কাছে অন্যায় ধমক্ খাইয়া একটু মনঃক্ষুণ্ন হইয়াছিল। সে জানালার গরাদে ধরিয়া স্তব্ধভাবে দাঁড়াইয়া ধারাবর্ষী মেঘমেদুর আকাশের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে চাহিয়াছিল। তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া প্রিয়নাথ সব বুঝিল। অনুতপ্ত কণ্ঠে ডাকিল, “সুরো!”
সুরবালা, চমকিয়া মুখ ফিরাইল।
“সুরো, রাগ করেচ?”
“না।”
প্রিয়ানাথ সুরবালার কাছে গিয়া তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া বলিল,