পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 দুঃখের কথা, পঞ্চাশ হাজার টাকা চোখে দ্যাখ্‌বার অবকাশ বাবা বেশীদিন পেলেন না। মৃত্যু এসে আমার এই অন্ধবধূর মত বাবাকেও অন্ধ করে অন্ধকারে নিয়ে গেল। জানি না, ইহলোকের এই পঞ্চাশ হাজার টাকার আওয়াজ তিনি তাঁর বৈতরণীর পরপার থেকে শুনতে পাচ্ছেন কিনা।

 হাঃ হাঃ!—আর, আর—আমার এই হাসির শব্দ! এও কি তাঁর কাণে যাচ্ছে? এ হাসির শব্দ কি তাঁর বুকের হাড়ে হাড়ে, তাঁর পাঁজরে-পাঁজরে গিয়ে ঘা মার্‌চে, মার্‌চে, মার্‌চে? আমি এটা জান্‌তে চাই। কেউ বল্‌তে পার?

 বেণু শুধু অন্ধ নয়। ভগবান্ তাকে অন্ধকারের মত কালো করে, আমার মুখের সামনে বিষের পাত্র পূর্ণ করে রেখেছেন।

 কিন্তু তার নাম রাখ্‌লে কে? নামের এমন সার্থকতা আমি আর কখনো দেখিনি! আশ্চর্য্য! তার সমস্ত রূপের অভাব, চোখের অভাব যেন এই মধুর, কোমল অথচ বিষাদমাখা স্বরের ভিতরে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল।

 কিন্তু, সে অন্ধ। সে কালো। তার দিকে চাইতে আমার ঘৃণা হোত, আমার রাগ হোত। আপনার চির-অন্ধকারের মধ্যে ডুবিয়ে কেন সে আমার জীবনকেও অন্ধকার করে দিলে? কেন দিলে— কেন?

 সে, বাড়ীর অন্য-অন্য সকলকার পায়ের শব্দের ভিতর থেকে আমার পায়ের শব্দ ঠিক চিনে নিতে পারত। এটা আমি লক্ষ্য করে দেখেচি। আমার পদশব্দ শুন্‌লেই সে মুখ তুলে উৎকর্ণ হয়ে থাক্‌ত। কিন্তু, আমি

১২০