পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 সেই পঞ্চাশ হাজার টাকায় আমি আমার জীবনের ফাঁক্‌টুকু ভরিয়ে তোল্‌বার চেষ্টা কর্‌লাম। প্রায়ই আমার বৈঠকখানায় বাইজীর “হিলি-মিলি-পানিয়া”র সঙ্গে মদের পিয়ালায় ঠিনি-ঠিনি সুর বেজে উঠ্‌তে সুরু হোল। ফলে, আমার জীবনের ফাঁক্‌টুকু যতই ভরে উঠ্‌তে লাগ্‌ল, বাবার লোহার সিন্ধুকও ক্রমে ততই খালি হয়ে আস্‌তে লাগ্‌ল।

 বেণুর চোখ ছিল না, কিন্তু কাণ ছিল। সে কিছু দেখ্‌তে না পেলেও শুন্‌তে পেত সব। আমাকে মুখ ফুটে কিছু না বল্লেও, তার মনে যে ঝড় উঠেচে, এটা আমি তার মুখ দেখে বেশ স্পষ্টই বুঝ্‌তে পারতাম। কিন্তু, বুঝেও আমার প্রাণে দয়া হোত না,— বরং একটা নিষ্ঠুর আনন্দের ভাব জেগে উঠ্‌ত।

 রাত্রে আমি প্রায়ই বাড়ীতে থাক্‌তাম না। বাড়ীতে থাক্‌লেও বেণুর কাছে যেতাম না। তার প্রতি আমার ঘৃণা ও রাগ ক্রমেই বেড়ে উঠ্‌ছিল।

 সেদিন হঠাৎ আমার জ্বর হোল। বাইরের ঘরে জ্বরে কাঁপ্‌তে কাঁপ্‌তে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। তারপর, কখন-যে আমার প্রাণের ইয়ারেরা আমার কাছে থাকাটা অনাবশ্যক মনে করে আস্তে আস্তে সরে পড়েছিল, আর কখন-যে চাকরেরা আমাকে ধরাধরি করে অন্দরে শুইয়ে দিয়ে এসেছিল, সে খেয়াল আমার আদোপেই ছিল না।

* * * *

 স্তব্ধ রাত্রে, ঘরের ঘড়ীটা হঠাৎ বেজে উঠল। সেই শব্দে আমার জ্ঞান হোল। আমি গুণ্লাম একটা, দুটো, তিনটে, চারটে! শেষরা তের

১২২