পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্ধ

থম্‌থমে নিস্তব্ধতাকে অকস্মাৎ জাগ্রৎ করে দিয়ে ঘড়ীটা আবার থেমে গেল। কেবল, রজনীর হৃৎপিণ্ডের শব্দের মত, সেই চির-জাগন্ত ঘড়ীটা ক্রমাগত মৃদুস্বরে করতে লাগল, টিক্-টিক্-টিক্!

 মনে হোল, কে-যেন আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,—খুব আল্‌তভাবে। আমার মাথার ভিতরটা তখন জ্বলে-পুড়ে যেন খাক্ হয়ে যাচ্ছিল, —কে আমার সেবা কর্‌চে সে কথা আমি বুঝতেও পার্‌লাম না, বুঝবার চেষ্টাও কর্‌লাম না।

 “বড় তেষ্টা—একটু জল।”

 আমার মুখের কাছে কে জলের গেলাস ধর্‌লে।

 জলপান করে আমি অনেকক্ষণ শুয়ে রৈলাম। অন্ধকারে দেখতে পেলাম না,—কিন্তু, কে আমাকে পাখার বাতাস কর্‌ছিল।

* * * *

 হঠাৎ আমার কপালে দু-ফোঁটা জল পড়্‌ল। এ কিসের জল? আবার, -এক, দুই, তিন ফোঁটা! একফোঁটা আমার ঠোটে পড়্‌ল, —বুঝলাম, সে চোখের জল! এই রাতে আমার শিয়রে বসে কাঁদে কে?

 তখন, একজনকে মনে হোল। হ্যাঁ,—একজনকে! কিন্তু কিন্তু, কেন কাঁদে সে?

 পীড়ায় বোধ করি, মানুষের মনকে পল্‌কা করে ফেলে। নইলে, ক-ফোঁটা অশ্রুজলে আমার অমন পাথরের মত মন ভিজে নরম হয়ে গেল কেন?

 আস্তে আস্তে ডাক্‌লাম, “বেণু?”

 উত্তর পেলাম না।

১২৩