পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

“সুরো, তুমিও যদি আমার কথায় বাগ কর্ব্বে তা’ হলে কার মুখ চেয়ে আমি বাঁচব বল? আমাতে কি আর আমি আছি? আমার কথায় রাগ? বল, রাগ করনি?”

 স্বামীর স্নেহ ও প্রেমে সুরবালার চোখ ছল্‌ছল্ করিতে লাগিল। “না, আমি রাগ করিনি” বলিয়া, স্বামীর বুকে মুখ লুকাইল।

 প্রিয়নাথ, স্ত্রীকে চুম্বন করিবার জন্য মুখ বাড়াইল। হঠাৎ ঘড়ীতে টং করিয়া সাড়ে নয়টা বাজিল। চুম্বন ভুলিয়া প্রিয়নাথ স্ত্রীকে ছাড়িয়া এক লাফে ঘরের দরজার কাছে গেল। তাড়াতাড়ি ছাতিটা লইয়া ছুটিল।

 এই কেরাণী-জীবন, এই বাঙ্গালী-জীবন —ক্ষণে সুখ, ক্ষণে দুঃখ, তুচ্ছ প্রেম—তুচ্ছ বিরহ—জীবনটা শুধু তাড়াতাড়ি আর দীর্ঘশ্বাস, আর কিছু না! বাঙ্গলার ঘরে ঘরে এই ছবি!

 প্রিয়নাথ সদর দোরের কাছে আসিয়া দেখিল, রাস্তা জলে জলময়, যেখানে জল নাই, সেখানে হাঁটুভোর কাদা। সে শীঘ্র খানিকটা ছেঁড়া খবরের কাগজ যোগাড় করিয়া জুতায়োড়া পা হইতে খুলিয়া সন্তর্পণে মুড়িয়া ফেলিল এবং তাহা বগলদাবা করিয়া জল-কাদা ভাঙ্গিতে ভাঙ্গিতে কেরাণীর দেবালয়—যেখানে সাহেব দেবতা, বড়বাবু পূজারী ও তাহারা পাণ্ডা—তাহার উদ্দেশ্যে চলিল।

 প্রিয়নাথ সুশিক্ষিত যুবক। বাপ-মা এবং প্রতিবেশীরা তাহার বিদ্যাবুদ্ধির তীক্ষ্ণতা দেখিয়া স্থির করিয়াছিলেন, কালে সে বংশের মুখোজ্জ্বল করিবে। এণ্ট্রান্সে সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করিয়াছিল—