কাল ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, আজ আর একটা না কিনিলে নয়। এদিক্কার দেওয়ালে একখানা ছেঁড়া কুটিকুটি গামোছা ঝুলিতেছে। এখানে একখানা ভাঙ্গাচোরা আয়না, ওখানে একটা ছেঁড়া কামিজ। সমস্ত অভাব যেন মূর্ত্তি ধরিয়া রাজেন্দ্রকে ভয় দেখাইতে লাগিল। হাতে পয়সা না থাকিলেও মাসের অন্যান্য দিনগুলা যেমন তেমন করিয়া কাটিয়া যায়; কিন্তু কেরাণীর সংসারে যেদিন টাকা আসে, সেই কাঙ্ক্ষিত মাসকাবার অতি—অতি ভয়ানক! অমলা বলিল, “কি ভাব্চ?”
তিক্তস্বরে রাজেন্দ্র বলিল, “চিতার আগুনের কথা।”
“ভাব্লে আগুন জ্বল্বে বৈ নিব্বে না।”
“জ্বলুক। সমস্ত জ্বলে-পুড়ে খাক্ হয়ে যাক্। আমি বাঁচি।”
“ছিঃ, তুমি না পুরুষ?”
“ভগবান্, আস্চে জন্মে আমি যেন স্ত্রীলোক হয়ে জন্মাই। কি বল অমলা, স্ত্রীলোক হলে আরত আপিসে কেরাণীগিরি কর্ত্তে আর কলম পিষে মর্ত্তে হবে না?”
“হ্যাঁগো, আমরা কি বড় সুখে আছি?”
“সুখে নেই? যে হাস্তে পারে, তার আবার দুঃখ কি? তুমি হাস্চ, আমি হাস্তে পার্চিনে কেন?
“ও-সব কথা আর ভেব না। এখন কি কর্ব্বে, বল?”
“কর্ব্ব আমার মাথা আর মুণ্ডু। বাকী আছে বাজারখরচ, কাপড়, ধোপার মাইনে, খুচরো খরচ, আর চাল, কয়লা। অন্য খরচ ক’রে হাতে থাকে পাঁচটাকা—সে ত সমুদ্রে শিশির। আমার অবস্থায় পড়্লে অন্য কেউ কি কর্ত্ত জান?”