পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোণার চুড়ী

 “জানি।”

 “কি?”

 অমলা দুষ্টামির হাসি হাসিয়া বলিল, “স্ত্রীকে চুম্বন।”

 “আত্মহত্যা—আত্মহত্যা কর্ত্ত! এখনো ঠাট্টা? এই রইল তোমার পাঁচটাকা—তোমার যা-খুসী কর!” বলিয়া, রাজেন্দ্র একখানা পাঁচটাকার নোট অমলার গায়ে ছুঁড়িয়া দিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।

 চারিদিক্ আচ্ছন্ন করিয়া সন্ধ্যা আজ শুধু পৃথিবীতে নামিয়া আসিল না;—নামিয়া আসিল অমলার অন্ধকার প্রাণের ভিতরেও। হাতের উপরে মুখ রাখিয়া স্তব্ধ হইয়া শূন্যদৃষ্টিতে অমলা সেইখানে মূর্ত্তির মত বসিয়া রহিল। তাহার মুখে তখন হাসি নাই, চোখে অশ্রু।

 অমলা তিন সন্তানের মা, কিন্তু তাকে দেখিলে সে-কথা বলিবার যো ছিল না। তার গড়ন ছিল পাত্‌লা, ছিপ্‌ছিপে; রং টক্‌টকে গৌর, মুখচোখ প্রতিমার মত। মাতৃত্বের পূর্ণগৌরব তার দেহ থেকে যৌবনকে শুক্‌না ফুলের মত খসাইয়া দিতে পারে নাই।

 কিন্তু দরিদ্রের ঘরে সৌন্দর্যচর্চ্চার অবকাশ কোথায়? যেখানে অর্থ নাই, সেখানে রূপযৌবন সব ব্যর্থ। রাজেন্দ্র তাহাকে ভালবাসিত; কিন্তু নিত্য-নুতন গহনায়, বিলাসের উপহারে ও মিষ্টকথায় সে ভালবাসাকে জাহির করিবার সময় তার ছিল না। সংসারের টানাটানিতে তার মন সর্ব্বদাই তিক্তবিরক্ত হইয়া থাকিত;—এমন-কি, অমলাকে ভালকথা বলিতে গেলেও, তার জিভ্‌ ফস্কাইয়া মন্দকথা বাহির হইয়া যাইত।

১৩১