পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

এর জন্যে পরে সে নিজেই মনে-মনে দুঃখিত হইত। অমলাও মুখ বুজিয়া এই ভালবাসার অত্যাচার সহিয়া থাকিত।

 মন তবু বুঝিয়াও বোঝ মানে না। আত্মীয়-কুটুম্বের বাড়ীতে একরকম খালিহাতে খালিগায়েই সে নিমন্ত্রণে যাইত। তাহার স্বভাবসুন্দর রূপ গহনা না-থাকার দরুণ বড় বেশী কমিয়া যাইত না বটে, কিন্তু যখন কোন ধনীর ঘরণী, গায়ের জড়োয়া গহনায় আলোর ঢেউ তুলিয়া চোখে অবজ্ঞার বিদ্যুৎ হানিয়া, দেমাকে ডগমগ হইয়া অমলার নিরলঙ্কার দেহের দিকে বাঁকা-চোথে চাহিয়া উপেক্ষার হাসি হাসিত, অমলার তখন মনে হইত, সে-যেন সকলকার পায়ের তলায় ধূলার মত মিশিয়া আছে।

 কোন কোন মুখরা আবার আত্মীয়তা জানাইয়া বলিত, “তোমার বর কি কাজ করে ভাই?”

 অমলা মৃদুস্বরে বলিত, “কেরাণীগিরি।”

 “তা এমন রাঙ্গা বৌয়ের গায়ে দুখানা সোণা-দানাও দিতে পারে না গা? আহা—”

 অমলা অতিকষ্টে বলিত, “আমি কখনো চাই নি-”

 “ওমা, চাইতেই বা যাবে কেন? চাইলে দেবে, নইলে দেবে না, এমন কথাও ত’ কখনো শুনিনি! আমরা যে গয়না পরি, এ কি ভিক্ষে ক’রে পরা? এমন মেয়ে আমরা নই—জিভ্‌ কেটে ফেলব, তবু সেধে মুখফুটে কিছু চাইতে পারব না—”

 অমলা ম্রিয়মাণ হইয়া উত্তর দিত, “সংসারে গয়নাই ত’ সব নয়! আর, আমার স্বামীর এমন অবস্থা নয় যে, তিনি আমাকে-”

১৩২