পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কেরাণী

ফলে তাহার জননীর মনে অকস্মাৎ একটি রাঙ্গা টুক্‌টুকে বধূর মুখদর্শন করিবার সাধ একান্ত প্রবল হইয়া উঠিল। তারপর কিরূপে একে একে বর্ষে বর্ষে তাহার ঘরে মা-ষষ্ঠীর দূতেরা আসিয়া আশ্রয় গ্রহণ করিল, তার মাতা, তারপর তার পিতার মৃত্যু হইল এবং অর্থাভাবে তাহার বি, এ পরীক্ষা দেওয়া হইল না, এখানে আমরা সে সমস্ত ইতিহাস সবিস্তারে বর্ণন করিতে চাহি না।

 প্রিয়নাথ চলিয়াছে, দুই হাঁটুর উপরে কাপড় তুলিয়া চলিয়াছে, আকাশ পাতাল ভাবিতে ভাবিতে চলিয়াছে। কেরাণীর ভাবনা! সবটা শুনিয়া কাজ নাই; কারণ, তাহার আদি নাই, অন্ত নাই!

 তাহার কত উচ্চ আশা ছিল-কোন্ মানুষের না থাকে? ধীরে ধীরে তাহার জীবনের সামনে একটা মহান্ আদর্শ ভবিষ্যের পটে আত্মসম্পূর্ণ হইয়া উঠিতেছিল, হয় ত কালে তাহা পূর্ণগঠন হইত; ধীরে ধীরে আপনাকে সে সংসার-সমরের জন্য উপযোগী করিয়া তুলিতেছিল, হয়ত, পরিণামে সে বিজয়ী হইত! কিন্তু ইতিমধ্যে প্রবাদবাক্য আপনার কঠোর সত্যতা সপ্রমাণ করিল— “মানুষ গড়ে, বিধাতা ভাঙ্গে!” প্রিয়নাথ গডিতেছিল! বিধাতা ভাঙ্গিল।

 জীবনের প্রভাতে, উপার্জ্জনক্ষম পিতার মৃত্যুতে, প্রিয়নাথ অকস্মাৎ একদা আপনার থেদ-করুণ ভাগ্যলিপির প্রথম পরিচ্ছেদ পাঠ করিবার সুযোগ লাভ করিল। সে কি কঠোর আঘাত! দেখিল, অনন্ত সংসারপাথারে সে নিরাশ্রয়— একাকী! বড় একাকী! তাহার বন্ধু নাই, সহায় নাই, অর্থ নাই,—আছে শুধু স্ত্রী, চারিটী সন্তান, আর শূন্য লৌহমঞ্জুষা! আর একানি জীর্ণভগ্ন দ্বিতল বাড়ী!