পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 সেখানে, বাড়ীর এক জানালায় দুটি ক্ষুধিত নয়নের লোলুপ দৃষ্টি অমলার ঘরের দিকে স্থির হইয় ছিল।

 অমলা সে দৃষ্টি দেখিল। যাহার সে দৃষ্টি, সেও অমলাকে দেখিল ৷

 অমলা ছবির মত নির্ব্বাক্ ও নিশ্চল হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। তাহার মনে হইল, সে দৃষ্টি যেন সর্পের মত তাহার সর্ব্বাঙ্গকে বেষ্টন করিয়া ধরিতেছে! কিন্তু, তবু সে সেখান হইতে এক পা’ও নড়িতে পারিল না।

 ছুটিয়া গিয়া সামনের জানালাটা বন্ধ করিয়া দিবার জন্য, তাহার মনের ভিতরে একটা ইচ্ছা জাগিয়া উঠিতেছিল; কিন্তু কেমন-একটা অন্যায় দুর্ব্বলতা তাহার হৃদয়ের মধ্যে সেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছিল।

 জানালা খোলাই রহিল।

 সে দৃষ্টি তখনও স্থির—এবং, তেমনি ক্ষুধিত, তেমনি ব্যগ্র!

 সে-যেন অমলাকে গ্রাস করিতে চায়, তাহার অস্তিত্ব লোপ করিয়া দিতে চাহে!

 সে দৃষ্টির কি মোহ!—চারিদিকের অন্ধকারের মধ্যে প্রদীপ্ত অগ্নির মত সে দৃষ্টি জ্বলিতেছিল, জ্বলিতেছিল জ্বলিতেছিল!

 হঠাৎ পাশের ঘর হইতে অমলার মেয়ে কাঁদিয়া উঠিল। সেই কান্নায় অমলার সাড়্‌ হইল।

 থর্‌থর্‌ করিয়া কাঁপিতে-কাঁপিতে অমলা মেঝের উপরে বসিয়া পড়িল।

* * * * *

 সেদিন স্বামী-স্ত্রীতে আর কথাবার্ত্তা হইল না; তার পরদিন না- তার পরের দিনও না! অভাবের সংসারে ঝগড়া কিছু নূতন ব্যাপার নয়; তার

১৪০