পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোণার চূড়ী

আগেও অনেকবার তারা ঝগড়া করিয়াছে। কিন্তু এবারকার ঝগড়ার এই নীরবতা কিছু নূতনতর।

 মুখ ফস্কাইয়া আল্‌টপ্‌কা একটা খারাপ কথা বাহির হইয়া গিয়াছে বলিয়া রাজেন্দ্র এখন মনে-মনে অনুতপ্ত। স্ত্রীর সঙ্গে আবার মিট্‌মাট্ হইয়া গেলে সে বর্ত্তিয়া যায়; কিন্তু আগে থাকিতে সাধিয়া কথা কহিলে পাছে তাহার স্বামিত্বগৌরব খর্ব্ব হইয়া পড়ে, সেই ভয়ে সে আপনার মৌনব্রত ভঙ্গ করিল না।

 সংসারে কোন বড় ঘটনার কারণ খুঁজিতে গিয়া আমরা ছোট ঘটনাকে অবহেলা করিয়া এড়াইয়া যাই। কিন্তু সাংসারিক ক্ষুদ্র ঘটনাগুলি সাধারণের চোখে তুচ্ছ হইলেও অনেক সময়ে তাহারাই বড় ঘটনার জন্ম দেয়—বীজ যেমন ছোট হইয়াও বড় গাছের জন্ম দেয়। আমরা এটা বুঝি না বলিয়াই অনেক সময়ে অনেক বড় ঘটনার সঙ্গত কারণ খুঁজিয়া পাই না।

 এ-কয়দিন অমলা রোজ ছাদে উঠিয়াছে, আর রোজ চিঠি পাইয়াছে।

 চিঠিগুলা যখন সে কুড়াইয়া লইত, তখন সে স্পষ্ট বুঝিতে পারিত, অন্য বাড়ীর ছাদ হইতে আর একজনের তীক্ষ্ণদৃষ্টি তাহার উপরে স্থির হইয়া আছে। অমলার মনে হইত, সে দৃষ্টি হইতে যেন একটা অসহ্য উত্তাপ আসিয়া তাহার দেহের মাংস ভেদ করিয়া বুকের ভিতরে গিয়া স্পর্শ করিতেছে। পাছে চোখোচোখি হয় সেই ভয়ে সে আপনার দৃষ্টিকে নত করিয়া রাখিত।

১৪১