পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 কতবার সে মনে করিয়াছে, চিঠি পাইলেই ছাদের উপরে দাঁড়াইয়াই কুটিকুটি করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিয়া দিবে! কিন্তু চিঠি পাইয়া তাহার মনে হইত, ভিতরে না-জানি কত রহস্যই আছে; একবার না পড়িয়া কি ফেলিয়া দেওয়া যায়?

 তাহার রূপ নিয়া যতটা অত্যুক্তিপ্রকাশ করা যাইতে পারিত, পত্রলেখক তাহা করিত। সে-সব পড়িয়া অমলা খুসী হইত এবং মনে-মনে গর্ব্ব অনুভব করিত। পত্রে আরও কত কথা ছিল,—প্রেমের কথা, নিরাশার কথা, মিলন ও বিরহের কথা!

 কথাগুলা অমলার মন্দ লাগিত কি? বোধ হয়, না। কারণ, সেইটেই স্বাভাবিক। অমলা দরিদ্র-ঘরণী, সংসারের অভাব ও জ্বালাঝঞ্ঝাটের ভিতরে তাহার রূপ বনফুলের মত অনাদৃত হইয়া থাকিত, একথা আগেই বলা হইয়াছে। আপনার যৌবন-বসন্তে ভাল করিয়া কোকিলের সাড়া সে কখনও শুনিতে পায় নাই—তাহার জীবনের একটা মধুর অংশ অনেকটা অপূরন্ত হইয়া ছিল। আজ এক ধনীর নন্দন তাহার চরণ-পূজা করিতে চাহিতেছে, ইহাতেও অবিচল থাকা অমলার পক্ষে বড় শক্ত কথা। হয়ত তেমনধারা মনের বলও তাহার নাই। আর এই সঙ্গীন মুহূর্ত্তে তাহাকে সৎপরামর্শে সাবধান করিবার লোকও সংসারে স্বামী ছাড়া আর কেহ ছিল না। কিন্তু, স্বামীর সঙ্গেও তাহার কথা বন্ধ!

* * * *

 আরসিতে অমলা মুখ দেখিতেছিল,—হাঁ, তাহার চোখের কোণ্‌ হইতে অটুট যৌবনের চঞ্চল বিদ্যুৎ এখনও সরিয়া যায় নাই; কপোলের

১৪২