পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোণার চুড়ী

গোলাপী রং অযতনে একটু মলিন হইলেও এখনও বিবর্ণ হইয়া যায় নাই। ঝী-মুখপুড়ী ঠিক বলিয়াছে,—প্রতিমার মত রূপই বটে! এ রূপ দু’খানা সোণাদানা না হইলে কি মানায়?

 আপনার হাতদু’খানি সে ঘুরাইয়া-ফিরাইয়া দেখিল। ক-গাছা কালোরংয়ের ‘জলতরঙ্গ’ চুড়ী রিণিরিণি করিয়া তাহাকে যেন উপহাস করিতেছিল। চুড়ীগুলাকে আছড়াইয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য তাহার মনে একটা দুর্দ্দম বাসনা প্রবল হইয়া উঠিল। কিন্তু এ চুড়ী ভাঙ্গিলে ফের কাচের চুড়ী কেনাও যে তার পক্ষে শক্ত কথা!—ভ্রুসঙ্কোচ করিয়া অমলা বিরক্তভাবে হাতনাড়া দিল,— কাচের চুড়ীগুলা কৌতুকহাস্যে কলধ্বনি করিয়া উঠিল, রিণিঝিনি রিণিঝিনি রিণিঝিনি!

 পরণের কাপড়খানা ছেঁড়া-খোঁড়া, রান্নাঘরের ধোঁয়ামাখানো। ছেঁড়া মেঘে চাঁদের আলোর মত, ছিন্নবস্ত্রমধ্য দিয়া তাহার শুভ্র দেহের লাবণ্য স্থানে স্থানে বাহির হইয়া পড়িয়াছে।

 তাহার স্বামীর সকল ব্যবহারের ভিতরে আজ সে একটা গভীর অবহেলা অনুভব করিল। সকলেই কিছু বড়লোক হয় না, মুখের দুটি মিষ্টি কথাতে ত’ আর পয়সা লাগে না! তার স্বামী যে তাতেও নারাজ!

 তিক্তবিরক্ত চিত্তে অমলা জানালার ধারে গিয়া দাঁড়াইল।

 ঘোরঘটা করিয়া সেদিন অবিরাম বাদল নামিয়াছে! শূন্যপথে ধূর্জ্জটী যেন আজ মহা তাণ্ডবে মাতিয়া আছেন,—ঐ নিকষ কালো মেঘপুঞ্জ যেন তাঁহারই নৃত্যোৎক্ষিপ্ত জটাজূটের রুদ্রলীলা প্রকাশ করিতেছে এবং বিদ্যুতে-বিদ্যুতে যেন তাঁহারই নেত্রবহ্নি রহিয়া রহিয়া জ্বলিয়া উঠিতেছে! পথ প্রায় জনশূন্য, কেবল মাঝেমাঝে এক-একজন পথিক ছাতিতে

১৪৩