কোনরকমে কাঁধ পর্য্যন্ত বাঁচাইয়া নির্জীবের মত আস্তে-আস্তে চলিয়া যাইতেছে। দূরের বাড়ীগুলা অস্পষ্ট, তাহাদের পিছন হইতে দুই তিনটি তালগাছের ঝাপসা-সবুজ মাথা ঝোড়ো-বাতাসে হেলিয়া-হেলিয়া পড়িতেছিল। কতকগুলা কাক উড়িয়া-উড়িয়া তালগাছের উপরে বসিতেছিল, আবার উড়িতেছিল,—অমলা উদাসচোখে তাহাই দেখিতে লাগিল।
হঠাৎ পিছনে দরজা-খোলার শব্দ হইল। অমলা ফিরিয়া দেখিল, ঝী।
একটু আশ্চর্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “এই বৃষ্টিতে তুই কোথা থেকে এলি?”
মুখ টিপিয়া একটু রহস্যের হাসি হাসিয়া ঝী বলিল, “আকাশ থেকে খসে পড়্লুম দিদিমণি!
অমলা বেশ বুঝিতে পারিল, ঝীয়ের এই হঠাৎ আবির্ভাব ও ধরণধারণে একটা-কিছু ব্যাপার লুকোনো আছে। সন্দিগ্ধস্বরে সে বলিল, “তোর কি দরকার রে?”
“একজন পাঠিয়েচে।”
অমলার মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। আস্তে আস্তে সে বসিয়া পড়িল।
ঝী বলিল, “আমি কি করব বল দিদিমণি! আমরা চাকরি করি, যা বলে তা দাঁতে কুটো নিয়ে তখনি কর্তে হয়।”
অমলা চুপ করিয়া রহিল।
ঝী ভরসা পাইয়া বলিল, “আর তাও বল্তে হবে দিদি, মানুষটা তোমাকে দেখে পাগলের মত হয়ে গেছে।”—কথাটা শুনিয়া অমলার মুখ কি-রকমধারা হয়, তাহা দেখিবার জন্য সে সুমুখে ঝুঁকিয়া পড়িল।