রাজেন্দ্র, অমলার এই স্তব্ধভাব দেখিয়া বোধহয় ব্যথিত হইল। ক্ষুণ্ণকণ্ঠে সে ধীরে-ধীরে বলিল, “দেখ অমলা, আমাদের মত গরীব কেরাণীর সংসারে দুজনেই দুজনার মন বুঝে চলা উচিত। দেখ্চ ত, গাধার মত খেটেখেটেও সায়েবের মন পাই না, সর্ব্বদাই বকুনি খাই। সংসারের টানাটানিতে বাড়ী এসেও মনে কোন সুখ নেই। এ খাটুনি, এ কষ্ট একলা হ’লে কি এতদিন সহ্য করতাম? খালি তোমাদের মুখ চেয়ে এত অপমান আর কষ্ট সয়ে আছি বইত নয়! সময়ে-অসময়ে মুখ দিয়ে যে দুটো অকথা-কুকথা বেরিয়ে যায়, একি আর আমি ইচ্ছে করে করি, অমল?”
অমলার মাথা ক্রমেই নীচু হইয়া পড়িতেছিল।
রাজেন্দ্র বলিতে লাগিল, “তোমাকে যে আমি ভালবাসি, এটা আমি মুখের কথায় বা কাজে প্রকাশ করতে পারি না বলে আমাকে তুমি সন্দেহ কোর না। দেখ, আপিস থেকে আসি তোমারই মুখ ভাবতেভাবতে, রাস্তায় আস্তে-আস্তে এই ভেবে শান্তি পাই যে, বাড়ীতে আমার অপেক্ষায় একজন যত্ন করবার লোক পথচেয়ে বসে আছে! তোমাকে তুমি যত্ন করতে পারি না, এজন্যে আমিও মনে-মনে কষ্ট পাই; কিন্তু, কি করব, উপায় নেই— উপায় নেই।” —একটু থামিয়া আবার বলিতে লাগিল, “আজ চার বছর আমি আমার জল খাবারের চারটি করে পয়সা জমিয়ে আস্চি। এ-কথা তুমি জান না। আজ ক’দিন হ’ল, আমার মাইনে বেড়েচে, এ-কথা শুন্লে তুমিও বোধ করি সুখী হবে; তাই সাহস করে সেই জমানো টাকার ওপরে আরও কিছু টাকা ধার করেচি। কেন জানো? এই জন্যে।”—বলিয়া, রাজেন্দ্র কাপড়ের ভিতর হইতে একটি বেগুনি রংয়ের কাগজের মোড়ক বাহির