পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোণার চুড়ী

করিল। মোড়কটি খুলিলে দেখা গেল, তাহার ভিতরে ক’গাছা নূতন সোণার চুড়ই রহিয়াছে।

 অমলার মনে হইল, কে-যেন তাহাকে খুব-একটা উঁচু জায়গা হইতে ধাক্কা মারিয়া নীচে ফেলিয়া দিল। যে স্বামীর ভালবাসাকে এতদিন সে সন্দেহ করিয়াছে, সেই স্বামী যে তাহাকে মৌখিক ভালবাসা জানাইতে না পারিলেও, তাহাব জন্য নিজের সামান্য জলখাবারের পয়সা-কয়টিও বাঁচাইয়া আসিতেছেন, এই অজ্ঞাত সত্যকথাটা আজ অমলার সারা জীবনটাই যেন মিথ্যা করিয়া দিল। স্বামীর উপরে মিছা অভিমানে ও সয়তানের প্রলোভনে এখনি সে হয়ত কি করিতে কি করিয়া বসিত! তাহার মন যে এত সহজে বেঁকিয়া যাইতে পারে, এটা সে আদোপেই জানিত না;—ভাগ্যে এখনও এই মুহূর্ত্তের ভূলকে শোধ্‌রাইবার উপায় আছে! অমলা আপনার রূপকে ধিক্কার দিল, আপনার মনকে ধিক্কার দিল, আপনার অভিমান ও সন্দেহকে ধিক্কার দিল! সোণার চুড়ী পাইয়া অমলার প্রাণে আজ কোন আনন্দই হইল না, তাহার নারী-হৃদয়ে: তাহার গোপন দুর্ব্বলতা এমনভাবে ধরা পড়িয়া যাওয়াতে, সে আর আপনাকে সালাইতে পারিল না, নিজের কোলের ভিতরে মুখ লুকাইয়া অমলা একেবারে শিশুর মত ডাক্ ছাড়িয়া কাঁদিয়া উঠিল।

 রাজেন্দ্র অবাক্ হইয়া গেল। ভাবিল, সেদিনকার কটু কথা অমলা বুঝি এখনও ভুলিতে পারে নাই। অত্যন্ত দুঃখিতম্বরে সে বলিল, “মুখ দিয়ে একটা কথা হঠাৎ বেরিয়ে গেছে বলে কতদিন আর এমন করে থাক্‌বে অমল?”

 অমলা প্রায়-রুদ্ধ কণ্ঠে বলিয়া উঠিল, “ওগো আমার বুকটা

১৪৯