পাতা:পসরা - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পসরা

 মা সরস্বতীর দিকে পিছন ফিরিয়া সে অতি কষ্টে কোন সওদাগরী আফিসে একটি ২০ টাকা মাহিনার চাকুরী যোগাড় করিল। পাড়ার বিজ্ঞেরা আসিয়া বলিয়া গেলেন, “চাকরীর বাজার বড় মাগ্যি! তোমার অতি সৌভাগ্য!”

 তারপর এই ‘সৌভাগ্যের’ ভিতর দিয়া একে একে ছয়টি দীর্ঘ বৎসর কাটিয়া গিয়াছে এবং কুড়িটি টাকার উপর আরও পাঁচটি টাকা আজ কয়েক মাস ঘরে আসিতেছে। কি ‘সৌভাগ্য’ রে!

 হতভাগিনী সুরবাল।! পরণে ছেঁড়াখোড়া কাপড়, যত্নাভাবে অমন মেঘের মত কেশরাশি রুক্ষ, অমন সোনার বরণ দেহে কে যেন কালি মাড়িয়া দিয়াছে! গায়ে একখানি গয়না নাই, প্রাণে এতটুকু সুখ নাই মুখে সদাই হাসি, কিন্তু তার পিছনে যে কি হাহাকার লুকানো আছে— দরদী ভিন্ন কে তাহা বুঝিবে?

 তিনটি মেয়ে, একটি ছেলে বড় মেয়েটির বয়স আট বৎসর,—দুদিন বাদে তাহাকে পার করিতে হইবে।

 শত্রুর মুখে ছাই দিয়া এত গুলিকে লইয়া একটি সংসার, —চাল, ডাল, ঘি, তেল, নিত্য বাজার আছে, লজ্জা-নিবারণের ন্যাক্‌ড়া আছে, ছেলেপিলের দুধ আছে, সমাজের কুটুম্বিতা আছে, নিত্য রোগের ডাক্তারের ভিজিট, ঔষধ-পথ্য আছে—নাই কি? বলিতে পার মাসে পঁচিশটি টাকায় কোন্ ইন্দ্রজালে এই ভদ্র গৃহস্থের মান এবং প্রাণ রক্ষা হয়?

 এখন আর কি জিজ্ঞাসা করিবে, প্রিয়নাথ কি ভাবিতেছিল?

 হঠাৎ একখানা দু’ঘোড়ার মস্ত চক্‌চকে গাড়ী বাতাসের আগে ছুটিয়া আসিল। প্রিয়নাথ, সন্ত্রস্ত হইয়া পথ ছাড়িয়া সরিয়া দাঁড়াইল, গাড়ীর